
বাদশা আলমগীর
অন্ধকার রাত। দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ। ভেতরে স্ট্রোকের রোগী লিটন শুয়ে আছেন, তার পাশে উৎকণ্ঠিত স্বজনেরা। জীবন বাঁচাতে দ্রুত কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের দিকে ছুটছিল গাড়িটি। কিন্তু ভাগ্যের ছক ছিল অন্যরকম—খলিশাকুণ্ডি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া মাঠে অপেক্ষায় ছিল একদল ডাকাত।
রাস্তার ওপর ফেলে রাখা গাছের গুঁড়ি দেখে হঠাৎ থমকে যায় অ্যাম্বুলেন্স। মুহূর্তেই পাঁচ-ছয়জন মুখোশধারী ডাকাত দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালক রতনের গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তারা চিৎকার করে ওঠে—“টাকা দাও, না হলে রেহাই নেই।” চারপাশ নিস্তব্ধ, ভয় আর আতঙ্কে জমে যায় সবাই। চোখের সামনে রোগী শ্বাস নিচ্ছেন অক্সিজেনের মাস্কে, অথচ স্বজনদের হাতে তুলে দিতে হলো শেষ সম্বল। মাত্র কয়েক মিনিটেই ডাকাতেরা ছিনিয়ে নেয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা। যাওয়ার আগে হুমকি ছুঁড়ে দেয়—“একটা কথা বললে সর্বনাশ হবে।”
চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে চালক রতন বলেন, “রাতে রোগীকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ডাকাতেরা গাড়ি থামিয়ে অস্ত্র ঠেকায়। কিছুই করার ছিল না।” রোগীর স্বজন জালাল কণ্ঠ রুদ্ধ করে জানান, “আমরা ওই রাস্তা দিয়ে যেতে নিষেধ করেছিলাম। অথচ সেই পথেই ডাকাতদের ফাঁদে পড়তে হলো। চোখের সামনে টাকা ছিনিয়ে নিল, আমরা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।”
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন হতাশার সুরে বলেন, “রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। পথে এ ধরনের ডাকাতির ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ।”
কিন্তু ঘটনার পরও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোলাইমান শেখ জানান, “এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি, তাই আমরা কিছুই জানি না।” পুলিশের এ বক্তব্যে এলাকাবাসীর মধ্যে আরও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সে করে জীবন বাঁচাতে ছুটছিল পরিবার—কিন্তু পথে পড়লো ডাকাতের কবলে। প্রশ্ন এখন একটাই—জীবন নিয়ে ছুটতে থাকা রোগীর নিরাপত্তাও যদি এভাবে বিপন্ন হয়, তবে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে কোথায়?