
ইট বা ইষ্টক যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ব্রিক। কোন স্থাপনা বা ইমারত তৈরির একটি অতি আবশ্যকীয় ও মৌলিক উপাদান। সাধারণত মাটিকে পানিতে ভিজিয়ে কাদা বানিয়ে একটি আয়তঘনক আকারের ছাঁচে বা ফর্মার মধ্যে দিয়ে কাঁচা ইট তৈরি করা হয়। এরপর এই কাঁচা ইট রোদে শুকানো হয়। তারপর শুকনো কাঁচা ইটকে আগুনে পোড়ালে পাকা ইট তৈরি হয়। আগুনে পোড়ানো ইট ঠাণ্ডা এবং আর্দ্র আবহাওয়ার বিরুদ্ধে ভাল কাজ করে ও বেশ মজবুত প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলে বহু প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা ইট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পিছন ফিরে তাকালে দেখা যায় যে, পাথুরে যুগ পেরিয়ে সভ্যতা এগিয়েছে কাদা মাটির আগুনে পোড়ানো ইটের হাত ধরেই। বিশেষ করে নগরায়নের ক্ষেত্রে মাটি পোড়ানো ইটের অবদান ছিল আল্পনার মতো। সে সময় ইট ছিল নগরায়নের প্রতীক। সেটাও খ্রিস্টপূর্ব ৭,৫০০ বছর বা আজ থেকে প্রায় ৯৫০০ বছর আগের কথা। এরচেয়ে কিছু অল্প প্রাচীন ইট খ্রিস্টপূর্ব ৭,০০০ থেকে ৬,০০০ সালের মধ্যে জেরিকো এবং কাতাল হাইয়ূক এলাকায় দেখা গেছে। তবে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে আগুনে পোড়া ইট তৈরী করা হয়েছিল। বাংলাদেশে খ্রিস্টপূর্ব চার শতকের পুরনো নগরী পুন্ড্রবর্ধন বা মহাস্থানগড়ের নির্মাণ কাজে প্রথম মাটি পোড়ানো ইটের ব্যবহারের খোজ পাওয়া গেছে। তখন থেকেই ইট জোড়া দেওয়ার কাজে চুন ও চিটাগুড় বা চুন ও সুরকির মিশ্রণ প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে যা ইটের তৈরি স্থাপনাগুলোকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। সময়ের ব্যবধানে এই প্রযুক্তিতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। চুন ও চিটাগুড় বা চুন ও সুরকির মিশ্রণ প্রযুক্তি বদলে ইটের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে বালি ও সিমেন্টের মিশ্রণ প্রযুক্তি যা ইমারতকে যোগিয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি ও সৌন্দর্য। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বদলেছে মাটি পোড়ানো ইটের মান ও প্রস্তুত প্রণালী। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে ইট উৎপাদন ও পোড়ানো প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে ইট ভাটাগুলোকে দেওয়া হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম। যেমন, ড্রাম চিমনির ইট ভাটা, ফিক্সড চিমনির ইট ভাটা, জিগ-জ্যাগ পদ্ধতির ইট ভাটা, হাইব্রিড হফম্যান কিলন পদ্ধতির ইট ভাটা, টানেল কিলন পদ্ধতির ইট ভাটা, ভার্টিকাল শ্যাফট ব্রিক কিলন পদ্ধতির ইট ভাটা ইত্যাদি।
একটা সময় মানুষ যেকোনো ইমারত নির্মাণের জন্য পাথর ব্যবহার করতো। কিন্তু পাথরের দুষ্প্রাপ্যতা, পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহারের অসুবিধা সহ বিভিন্ন কারণে পাথরের পরিবর্তে মাটি পোড়ানো ইটের ব্যবহার শুরু হয়। যদিও ইট পাথরের মত দীর্ঘস্থায়ী এবং মজবুত হয় না তবুও ইমারতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, সহজলভ্যতা, অল্প খরচ ও স্বল্প ওজনের জন্য এর জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। তবে মাটি পোড়ানো এই ধরনের ইটের বহুল ব্যবহার থাকলেও বর্তমান সময়ে এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ে সবচাইতে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম হয়েছে। এই সময়ের টক অফ দা এনভাইরনমেন্ট বা বার্নিং ইস্যু হয়ে পড়েছে ইট ভাটা শিল্প। পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয়েছে জনমত। এই অবস্থায় ইট ভাটা চলবে, নাকি চলবে না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল। বিভিন্ন রকমের আইনি জটিলতার শিকার হয়ে ব্যবসা নিয়ে বড় ধরনের গোলক ধাঁধাঁয় পড়েছে এই শিল্পের উদ্যোক্তাগণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে সরকার এই শিল্পের সম্প্রসারণের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করে। এই সকল আইনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০ যা ইট ভাটা শিল্পের ওপর প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে শুধুমাত্র ইট ভাটা শিল্পের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে যে আইনগুলো প্রনয়ন করা হয় তা হলো, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন (সংশোধন) আইন, ২০১৯ । এই সকল আইনগুলোতে বিদেশি সংস্থাগুলোর চাপে এমন কিছু স্ববিরোধী এবং অবাস্তব ধারা-উপধারা সংযোজন করা হয়েছে যা ইট ভাটা মালিকদের জন্য কখনোই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। ফলে সরকার এবং ইট ভাটা মালিকরা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে। দিনকে দিন সরকার এই আইনের কঠোর প্রয়োগের দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ইট ভাটা মালিক ও শ্রমিকদের মনে।
দেশের অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশীদার হচ্ছে এই ইট ভাটা শিল্প। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট ৭ হাজার ৮৬ টি ইট ভাটা চালু আছে। সময়ের পরিক্রমায় দেশের ইট ভাটাগুলো যেমন সনাতনী পদ্ধতি থেকে রূপান্তর হয়ে আধুনিক হয়েছে তেমনি দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাও মাটি থেকে আকাশে উঠে গেছে। উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হচ্ছে ইট ভাটা শিল্প।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ড্রাম চিমনির ইট ভাটাগুলোই ছিল ইট পোড়ানোর একমাত্র মাধ্যম। চিমনির স্বল্প উচ্চতা ও অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার রোধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত- ২০১০) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। আইন কার্যকর করতে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ড্রাম চিমনির ইট ভাটায় ইট পোড়ানো বন্ধ করে ১২০ ফুট উচ্চতার ফিক্সড (স্থায়ী) চিমনির ইট ভাটা স্থাপন করার নির্দেশনা দেয় সরকার। সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে উৎপাদনের সক্ষমতা অনুযায়ী কম-বেশি এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইট ভাটা শিল্পের উদ্যোক্তারা ড্রাম চিমনির ইট ভাটা ভেঙ্গে ১২০ ফুট উচ্চতার ফিক্সড চিমনির ইট ভাটা স্থাপন করে। বছর তিনেক না যেতেই ২০১৩ সালে সরকারের তরফ থেকে আসে নতুন আরেক নির্দেশনা। ১২০ ফুট উচ্চতার ফিক্সড চিমনির ইট ভাটা ভেঙ্গে গড়তে হবে আধুনিক পদ্ধতির জিগ-জ্যাগ ইট ভাটা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে দেশের অধিকাংশ উদ্যোক্তাগণ আবারও সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে উৎপাদনের সক্ষমতা বিবেচনায় কম-বেশি তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১২০ ফুট উচ্চতার ফিক্সড চিমনির ইট ভাটা ভেঙ্গে আধুনিক পদ্ধতির জিগ-জ্যাগ ইট ভাটা স্থাপন করে। অনেকটা হাস্যকর ও কাকতালীয় ঘটনা হলেও এটা সত্য যে, এত বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করে আধুনিক পদ্ধতির জিগ-জ্যাগ ইট ভাটা স্থাপন করেও নতুন লাইসেন্স বা লাইসেন্স পাওয়ার পর মেয়াদ আন্তে নবায়ন পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা। প্রথমে বলা হলো যে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তা থেকে এক কিলোমিটার বা ১০০০ মিটারের দূরত্ব না থাকলে লাইসেন্স বা লাইসেন্সের নবায়ন পাবে না কোন ইট ভাটা। আবার এখন বলা হচ্ছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটার বা ১০০০ মিটারের দূরত্ব না থাকলে লাইসেন্স পাবে না কোন ইট ভাটা। ফলশ্রুতিতে দেখা গেছে সারা দেশে গড়ে ওঠা মোট ৭,০৮৬ টি ইট ভাটার মধ্যে ৪,৫০৫ টি ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স বিহীন এই সকল ইট ভাটাকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে দিন দিন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে প্রশাসন। লাইসেন্স বা লাইসেন্সের মেয়াদ আন্তে নবায়ন না থাকায় তারা পরিচালনা করছে মোবাইল কোর্ট। চলছে জেল-জরিমানা। চলতি বছর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কার্যক্রম আরো জোরদার করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই অবস্থায় মরার ওপর খরার ঘা হয়ে হাজির হয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ সারা দেশের সব অবৈধ ইট ভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে অবৈধ ইট ভাটা ও ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট ডিভিশন। গত ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে তাদের সশরীরে হাজির হয়ে এবিষয়ে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। এই আদেশ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, “সমগ্র বাংলাদেশে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধে ২০২২ সালে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। রিট পিটিশন শুনানি শেষে আদালত ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করে প্রথম বারের মত অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনাররা এখনও পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রতিটি বিভাগীয় কমিশনারদের অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়ছিল"।
এইচআরপিবি এর রিট পিটিশন আমলে নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ অবৈধ ইট ভাটা ও ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারগণ এবং নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকগণসহ সাভার ও ধামরাই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে আদালতে সশরীরে হাজির হতে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রশাসনের উপরে বিচার বিভাগের এই ধরনের অস্বাভাবিক চাপের কারণে কোন প্রকার মানবিক বিচার বিবেচনা না রেখে সরকারি কর্মকর্তারা লাইসেন্সবিহীন ইট ভাটাগুলো গুড়িয়ে দিচ্ছে। উন্নয়নশীল একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই শিল্পের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা বা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই শিল্পের ভূমিকা কতটুকু এসব বিষয়ে কোন প্রকার বাধ-বিচার না করেই আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই শিল্পকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব করতে এর আধুনিকায়নের উপর গুরুত্ব না দিয়ে তা একেবারে নির্মূলের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই শিল্প থেকে সরকার কি পরিমান রাজস্ব পায়, কত লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, ইটের বিকল্প কি এবং সেটা ব্যবহারের সক্ষমতা এদেশের জনগণের আছে কিনা তা নিয়ে কোন গবেষণা নেই।
দেশের উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রংপুর সহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে যে, জিগ-জ্যাগ পদ্ধতির একেকটি ইটভাটায় বিনিয়োগের সক্ষমতা বিবেচনায় বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লাখ পর্যন্ত ইট তৈরি হয়। সারাদেশে বিদ্যমান ইট ভাটাগুলো থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি ইট উৎপাদিত হয়। এই শিল্প হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে দেশের উন্নয়ন খাত স্থবির হয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। একেকটা ইট ভাটায় প্রায় তিন শতাধিক লোক কাজ করে। সেই হিসেবে সারাদেশের ইট ভাটাগুলোতে প্রায় ২০ লক্ষ লোক কাজ করছে। এখানে ২০ লক্ষ লোক মানে ২০ লক্ষ পরিবার। প্রত্যেক পরিবারে পাঁচ জন করে লোক ধরলে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি মানুষের রুটি-রুজির উৎস হিসেবে কাজ করছে এই শিল্প। ইট ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে শুধুমাত্র এই ২০ লক্ষ কর্মক্ষম মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়বে তা নয় প্রায় ১ কোটি মানুষের রুটি-রুজির উৎস অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
একই সাথে সরকারের রাজস্ব খাতেও রয়েছে ইট ভাটা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এক একটি ইট ভাটা থেকে বছরে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা সরকারি ব্যাংক হিসেবে জমা হয়। ভ্যাট-ট্যাক্স সহ বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্সের সরকারী ফি বাবদ জমা হয় এই টাকা। যেমন, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করতে বাণিজ্যিক কর পরিশোধ ও লাইসেন্স ফি বাবদ ৫০ হাজার টাকা, আয়কর বাবদ ১ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা, বাৎসরিক ভ্যাট বাবদ ৫ লক্ষ টাকা, বিএসটিআই লাইসেন্স বাবদ তিন বছরের জন্য ৬০ হাজার টাকা অর্থাৎ বছরে ২০ হাজার টাকা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে আবেদন ফি বাবদ ৩০ হাজার টাকা, কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাবদ প্রায় ৫ হাজার টাকা, ফায়ার সার্ভিস এর লাইসেন্স গ্রহণ বাবদ প্রায় ৫ হাজার টাকা, জেলা প্রশাসকের ইট পোড়ানো লাইসেন্স বাবদ তিন বছরের জন্য ৪৫ হাজার টাকা, অর্থাৎ বছরে ১৫ হাজার টাকা ও ইট ভাটার অভ্যন্তরীণ জমির উপর বাণিজ্যিক হারে সরকারি ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। একটি ইট ভাটা থেকে বাৎসরিক সব মিলিয়ে ৮ লক্ষ টাকা (ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কম-বেশি) হলে সারাদেশে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা সরাসরি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংক হিসেবে জমা হয়। সরকারের রাজস্ব আহরণের এই গুরুত্বপূর্ণ খাত আচমকা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতির জন্য তা ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এই অবস্থায় কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে ইট ভাটা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স এসোসিয়েশন (বিবিএমওএ)। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইট ভাটা মালিকদের হয়রানি করা হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিবিএমওএ বা ইট ভাটা মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তারা। সংগঠনের সভাপতি জনাব ফিরোজ হায়দার খান বলেন, "বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে বিভিন্ন ইট ভাটায় হানা দিয়ে জেল ও জরিমানা করা হচ্ছে। এসব হয়রানি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে"।
এক লিখিত বক্তৃতায় ফিরোজ হায়দার খান আরও বলেন, "বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে ইট ভাটা মালিকরগণ অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ইট ভাটার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তারা দেশের রাস্তাঘাট ও ঘর-বাড়িসহ সকল উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় ইট সরবরাহ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সমতা রেখে ইট ভাটার মালিকরা বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তির জিগ-জ্যাগ ইট ভাটা স্থাপন করেছে যা জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও উপমহাদেশে টেকসই এবং সহজ প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে দেশে বায়ু দূষণের চিত্র বদলে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, এখন দেশের ইট ভাটাগুলো মাত্র ৫-১০ শতাংশ বায়ুদূষণ করছে অথচ পূর্বে ইট ভাটার দূষণমাত্রা ছিল ৫৮ শতাংশ। একই জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে জৈববস্তু পোড়ানোতে ৪০ শতাংশ এবং যানবাহনের কালো ধোয়া থেকে ৫০ শতাংশ দূষণ হচ্ছে। বিদ্যমান জিগ-জ্যাগ ইট ভাটায় অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইট ভাটার বিপরীতে ১ কোটি টাকার উপরে ব্যাংক লোন রয়েছে সারাদেশে যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এই ভাটাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সকল ব্যাংক লোন অনাদায়ী থেকে যাবে"।
লিখিত বক্তব্যে জনাব খান আরও বলেন, "সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি, ফিক্সড চিমনি ও লাকড়ি পোড়ানো ইট ভাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করার সিদ্ধান্তে উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করেছি। এ বিষয়ে আমরা সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটা না করে তার বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে আধুনিক পদ্ধতির জিগ-জ্যাগ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করে জেল, জরিমানা ও ভাঙচুর করছেন। আমরা কোনো অবস্থাতেই এই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দিতে চাই না। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্টরা ইট ভাটা শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের মুখোমুখি আমাদেরকে দাঁড় করানোর চেষ্ঠা করছে"।
এ সময় সরকারের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, "উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অত্যন্ত আন্তরিক হলেও বর্তমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জিগ-জ্যাগ ইট ভাটার সমস্যাগুলোর কোন স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার মাধ্যমেই ইট ভাটা পরিচালনার একটি যৌক্তিক সমাধান হবে"।
সম্প্রতি ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে ইট ভাটার মালিকগণ বিভিন্ন ধরনের সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে জিগ-জ্যাগ পদ্ধতির ইট ভাটা বন্ধের সরকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা আইনের সংশোধন দাবি করেছেন। তাদের দাবি হচ্ছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন (সংশোধন) আইন ২০১৯ এ বর্ণিত জিগ-জ্যাগ ইট ভাটার ছাড়পত্র ও লাইসেন্স প্রাপ্তির জটিলতার স্থায়ী নিরসন। এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। এসব দাবি আদায়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত ৪ মার্চ ২০২৫ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গত ১১ মার্চ ২০২৫ প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এই অবস্থায় সমস্যার সমাধান না হলে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার মধ্যদিয়ে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান দিয়েছেন তারা। এই সাত দফা দাবি না মানলে যেকোনো দিন থেকে সারা দেশে একযোগে ইটের উৎপাদন ও ইট বিক্রি বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সমিতির নেতারা। গত ১১ মার্চ ২০২৫ টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব মো: ফিরোজ হায়দার খান। আন্দোলন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের নিকট তুলে ধরা ইট ভাটা মালিকদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো-
১। ২০১৩ সনের ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের জিগ-জ্যাগ পদ্ধতির ইট ভাটা বৈধ উল্লেখ থাকলেও উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় "দূরত্ব নির্দিষ্ট" করনের কারণে দেশের কিছু জিগ-জ্যাগ ইট ভাটার মালিকগণ পরিবেশ ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলন এবং ট্যানেল কিলন এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারন করেছে। সুতরাং জিগ-জ্যাগ ইট ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দূরত্ব ৭০০ মিটার নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারী করতে হবে।
২। জিগ-জ্যাগ পদ্ধতিতে পরিচালিত ইট ভাটায় কোনো প্রকার হযরানী বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা যাবে না।
৩। জিগ-জ্যাগ পদ্ধতিতে পরিচালিত কোন ইট ভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪। ইট ভাটায় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মাটি সংগ্রহের জন্য ডিসি'র প্রত্যয়ন পত্র নেওয়ার বিধান বাতিল করতে হবে।
৫। ইট ভাটার জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ডিসি লাইসেন্স সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইস্যু বা নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির প্রত্যয়ন পত্র বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেওয়ার বিধান চালু করতে হবে।
৬। ইট ভাটাকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা দিতে হবে।
৭। ইট ভাটা পরিচালনায় দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এই দাবিগুলো না মানলে ইট ভাটা মালিকদের আন্দোলন যে কঠিন থেকে কঠিন তর হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি বড় ক্ষতের সৃষ্টি হবে। সরকারকে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ ঘোষণা করে সহনীয় মাত্রায় অভিযান চালিয়ে ধীরে ধীরে এই শিল্পকে গুটিয়ে আনতে হবে। শুধুমাত্র এই ধরনের ইটের উৎপাদনকে আটকালে হবে না এটার ব্যবহারও আটকাতে হবে। আমি মনে করি যে, মাটি পোড়ানো ইটের বিকল্পে যাওয়ার জন্য সরকার কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত নির্দেশনা প্রয়োজন আছে এবং ইট ভাটার ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ক্ষতিগ্রস্থ ইট ভাটা মালিকদের জন্য গোল্ডেন হ্যান্ডশেক এর মত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থনৈতিক সুবিধা থাকা উচিত। এই ধরনের গঠনমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ না করে পরিবেশ মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি সব স্থাপনা নির্মাণে মাটি পোড়ানো ইটের বিকল্পে যাবার নির্দেশনা দিয়েছে যেটা সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে আমি নিজেও বিশ্বাস করি না। পাশাপাশি সারা দেশে চলমান প্রায় চার হাজার অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের অভিযান চালাচ্ছে। সেই সাথে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনও ইট ভাটা মালিকদের ডেকে ডেকে বড় ধরনের আর্থিক জরিমানা করছে। এই অবস্থায় রাতারাতি দেশের সকল ইট ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে খুবই খারাপ প্রভাব পড়বে অবকাঠামো নির্মাণ ও কর্মসংস্থানে। এক্ষেত্রে সরকার সমন্বয়হীনভাবে তার একক সিদ্ধান্ত এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ। সরকারের উচিত হবে আগে সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত ড্রাম চিমনি ও ফিক্সড চিমনি'র ইট ভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং আধুনিক জিগ-জ্যাগ পদ্ধতিতে পরিচালিত ইট ভাটাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা মধ্যে নিয়ে আসা যাতে ইট ভাটা মালিকগণ তাদের ব্যবসা রূপান্তরের সুযোগ পান। সেই সাথে সরকারকে জিগ-জ্যাগ পদ্ধতিতে পরিচালিত ইট ভাটাগুলোকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে কতটা বেশি পরিবেশ বান্ধব করা যায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বড় উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আমি নিজে সরেজমিন ঘুরে দেখেছি এখনও সনাতন পদ্ধতির ইট ভাটাগুলো ব্যাপকভাবে চলছে এবং সেগুলোতে নির্দ্বিধায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আমি নিজে এবং আমাদের টিম স্থানীয় প্রশাসন ও ইট ভাটা মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে যতটুকু বুঝতে পেরেছি সেটা হলো তারা সবাই ম্যানেজড এবং সেখানে সবকিছু ম্যানেজ করেই তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যে দেশে এখনও পর্যন্ত প্রথম ধাপের সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনির ইট ভাটা চলছে সরকারি প্রশাসন অদ্যবধি তা নির্মূল করতে পারে নাই সেই দেশে তৃতীয় ধাপের জিগ-জ্যাগ পদ্ধতিতে পরিচালিত আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটাগুলোকে নির্মূলের উদ্যোগ গ্রহণ করা কতটা যৌক্তিক হবে তা ভালো করে ভেবে দেখা দরকার। সরকারের এই ধরনের অবিবেচনা প্রসূত আচরণ জনসাধারণের মধ্যে বৈষম্যবাদী আচরণ হিসাবে রূপ নিতে পারে।