প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৪২ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চরফ্যাশনে ডাক্তার আঁখি আক্তারের হাতে প্রসূতির মৃত্যুর পর এবার নবজাতকের মৃত্যু

‎ভোলা প্রতিনিধি॥
ভোলার চরফ্যাশনে আবারও চিকিৎসক ডা. আঁখি আক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এর আগে তার ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। এবারের ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার করিমজান মহিলা মাদ্রাসা রোডে অবস্থিত বেসরকারি ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশনের জিন্নাগড় ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মো. বাবুল মিয়া সকালে তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে নিয়ে যান ডা. আঁখি আক্তারের চেম্বার ‘মেঘনা ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’। পরীক্ষা শেষে ওই চিকিৎসক তাদেরকে ইকরা হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। বেলা ১২টার দিকে রোগী ভর্তি হলেও এরপর আর হাসপাতালে  চিকিৎসক আসেনি। নার্স ও আয়াকে দিয়েই পুরো ডেলিভারির কাজ সম্পন্ন করা হয়।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। তবে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পরিবারের কাউকে কিছু জানানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত জানানো হয়—বাচ্চা মৃত জন্মেছে। এরপর নবজাতকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা।

শোকাহত বাবুল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “ডাক্তার আঁখি আমাকে ভর্তি হতে বলেছিলেন। তিনি ওষুধ লিখে রক্ত আনতে বলেন, আমি সব প্রস্তুতি নেই। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর আর একবারও ডা. আসেননি। একজন নার্স আর আয়াই ডেলিভারি করিয়েছে। অনেক পরে জানালেন বাচ্চা মরে গেছে। পরে দেখি শরীরে নানান আঘাতের চিহ্ন।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আগে জানাতেন নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, তাহলে আমি সিজার করাতাম বা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। তার অবহেলায় আমার সন্তান মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।”

তদন্তে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় চরফ্যাশনের সেন্ট্রাল ইউনাইটেড হাসপাতালে মুন্নী আক্তার নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। তখনও ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে আঁখি আক্তার পালিয়ে গা-ঢাকা দেন। কিছুদিন পর আবার ফিরে এসে ইকরা হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকেন।

এর আগেও ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ইকরা হাসপাতালেই চিকিৎসকের অবহেলায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়দের দাবি, ডা. আঁখি আক্তার প্রায়ই চেম্বারে বসে টিকটক ভিডিও বানান, রোগী দেখেন না মনোযোগ দিয়ে। তার অবহেলায় একের পর এক প্রাণহানি ঘটলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, চরফ্যাশনে এমন অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের আধিক্য দিন দিন বাড়ছে। এসব স্থানে রোগীদের ভয় দেখিয়ে অপ্রয়োজনে সিজার করানো হয়, নেওয়া হয় অতিরিক্ত অর্থ। তারা অবিলম্বে এসব ক্লিনিক বন্ধ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা দাবি করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইকরা হাসপাতালে গেলে ডা. আঁখি আক্তারকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে সহকারী পরিচয়ে এক নারী বলেন, “হাসপাতালে শিশু মারা গেলে কি হয় এমনটা হতেই পারে,”—বলে ফোন কেটে দেন।
হাসপাতালে মালিক কুলছুম আক্তার পলি,বলেন একজন ডাক্তার কখনো চাননা একজন রুগী মারা যান।অনেকেই হয়তো অনেক কথা বলে।

ইকরা হাসপাতালের পরিচালক কাদের জানান, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ডা. আঁখি আক্তারকে রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন কুমার বশাক বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ভোলা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, “লিখিত অভিযোগ পেলে ডা. আঁখি আক্তারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়