প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নারীদের অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্য পরিমাপ: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম

আমজাদ মোল্লাঃ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ নারী সংস্থা (UN Women) যৌথভাবে বাংলাদেশের প্রথম হাউসহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (HPSA) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনটি দেশে নারীদের অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যত্নমূলক কাজের অর্থনৈতিক অবদান পরিমাপ করেছে, যা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়ের হিসাবের মধ্যে ধরা পড়লো।

২০২১ সালে নারীদের গৃহস্থালি ও যত্নমূলক কাজের আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান প্রকাশের মাধ্যমে অবশেষে নারীদের অদৃশ্য শ্রমকে গণনা করা হলো, যেটি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

প্রতিবেদনটি উঠে এসেছে যে, রান্না, কাপড় ধোয়া, বাসা পরিষ্কার, শিশু এবং বৃদ্ধদের দেখভাল, অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী সদস্যদের যত্ন নেওয়ার মতো কাজগুলো মূলত নারীরা করেন, কিন্তু এসব কাজের কোনও আর্থিক মূল্য ছিল না। এগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে অবমূল্যায়িত রাখা হয়েছিল, কিন্তু এই প্রতিবেদন সেই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

জাতিসংঘ নারী সংস্থা (UN Women) এবং BBS-এর যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবেদনের উদ্বোধন গতকাল ঢাকার BBS অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব শারমিন এস. মুরশিদ, ইউনাইটেড নেশনস উইমেন-এর প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং, এবং BBS-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

বাংলাদেশ সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নারীদের অবৈতনিক শ্রমকে জাতীয় আয়ের (জিডিপি) হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি নারীদের শ্রমকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগটি দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করার উদ্যোগ, যাতে নারী ও পুরুষের মধ্যে গৃহস্থালি কাজের ভারবন্টন সঠিকভাবে করা যায়। প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নারীদের অবৈতনিক কাজকে জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং পুরুষদেরও গৃহস্থালি কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।

এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি এবং সমাজে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়