প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৫৭ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় শশুরের নামে ভূয়া প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মোঃ মিজানুর রহমান:

কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নে রাস্তা মেরামতের টিআর কর্মসূচির আওতায় প্রায় চার লাখ টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মোঃ রাশেদ খান ও অফিস সহায়ক অর্ক হোসেনের বিরুদ্ধে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, অফিস সহায়ক, অর্ক হোসেন, কলাতিয়া ইউনিয়নের একটি রাস্তা মেরামতের প্রকল্পে নিজের শ্বশুরকে সভাপতি দেখিয়ে প্রায় চার লাখ টাকার একটি বিল পাস করেন। অথচ তার শ্বশুর ইউনিয়ন পরিষদের কোনো দায়িত্বে নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে কোনো কাজ না করেই ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিল উত্তোলন করা হয়। পুরো বিল তোলার বিষয়টি অস্বীকার করলেও অর্ক নিজ মুখে স্বীকার করেছেন যে, বিলের প্রায় ৫০ শতাংশ টাকা তিনি তুলেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ রাশেদ খান জেনে শুনেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেন এবং বিল পাসে সহযোগিতা করেন। তারা বলেন, অর্ক যেমন নিজের শ্বশুরকে সভাপতি বানিয়ে অনিয়ম করেছে, তেমনি রাশেদ খান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, কেরানীগঞ্জ জেনে বুঝে অনুমোদন দিয়ে একই অপরাধে জড়িত হয়েছেন। এ ঘটনার পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অর্ক ও তার শ্বশুর কাগজপত্রে ভুয়া স্বাক্ষর ও দলিলপত্র ব্যবহার করে প্রকল্পের বিল পাস করান। প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে দেখানো শ্বশুরের কোনো সরকারি পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও, অফিসের ভেতরের প্রভাব খাটিয়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এটি শুধু একটি প্রকল্প নয়— বরং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে।
এর আগে, ২০১৯ সালে অফিস সহায়ক, অর্ক হোসেনের বিরুদ্ধে অসহায়দের জন্য বরাদ্দ সরকারি কম্বল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। সে সময় তিনি কম্বল বিতরণ না করে নিজের কাছে রেখে দেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে পরে কম্বল অফিসে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়।
কলাতিয়া ইউনিয়নের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান বিউটি আক্তার জানান, অর্ক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হওয়ার সুবাদে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদ খানের অনুরোধে তাকে কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, “প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। রাশেদ খান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অনুরোধে আমি কাগজে স্বাক্ষর দিই। সবকিছু আগেই ঠিক করা ছিল।”

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদ খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অফিসেও তাকে পাওয়া যায়নি। 
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রীনা খাতুন জানান, বিষয়টি তার দপ্তরের নজরে এসেছে। তিনি বলেন, “বিষয়টি প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। আমরা তদন্ত শুরু করছি। প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা দাবি করেছেন, সরকারি অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনা একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রাখে। তারা বলেন, “প্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধ না করলে জনগণের টাকায় উন্নয়নের স্বপ্ন শুধু কাগজে-কলমেই থাকবে।”
সরকার প্রতি বছর গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়, যার মূল লক্ষ্য জনগণের জীবনমান উন্নয়ন কিন্তু মাঠপর্যায়ে তদারকির অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্রকল্প বাস্তবে না করেই বিল উত্তোলন করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের এই ঘটনা সেই দুর্নীতির আরেকটি উদাহরণ, যা প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ও কঠোর নজরদারি না থাকলে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়