প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভোগাই নদী কেড়ে নিল বেনীরগোফের ভিটেমাটি: চোখের সামনে বিলীন স্বপ্ন, শিকড়হীন অসহায় মানুষের আর্তনাদ

জান্নাতুল বাকী, রিপোর্টার 

ভোগাই নদীর বুকে এখন শুধু ঢেউ আর হাহাকার। সেই ঢেউ যেন প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে মানুষের হাসি, ঘরবাড়ি আর জীবনের প্রতিটি আশ্রয়। নদীর ভাঙনে শেরপুরের বেনীরগোফ এলাকার বহু পরিবার আজ সম্পূর্ণ গৃহহীন। যেখানে একসময় ছিল সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা পাকাঘর, খেলার মাঠ, উঠানে বটগাছের ছায়া—আজ সেখানে শুধু জল আর বেদনার অনুরণন।

দীর্ঘদিন ধরে ভোগাই নদীর পাড় ভাঙন হলেও এবারের ভাঙন যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে নদী গিলে নিয়েছে বসতভিটা, ফসলের জমি, স্মৃতি আর স্বপ্নের ঠিকানা। কারো গোয়ালঘর, কারো রান্নাঘর, কারো শয়নকক্ষ—সবকিছু ভেঙে ভেসে গেছে নদীর স্রোতে।

বেনীরগোফের বৃদ্ধা রাহিমা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বললেন, “এইখানেই তো ছিল আমার ঘরটা… বউ-ছেলেমেয়েদের নিয়ে কত সুখে ছিলাম। এখন শুধু পানি আর শূন্যতা।” তাঁর কথায় ভেসে আসে এক অদ্ভুত হাহাকার, যেন নদীর গর্জনের মাঝেও শোনা যায় মানুষের কান্না।

ছোট ছোট শিশুরা আজ গৃহহীন। কেউ খোলা আকাশের নিচে কাঁদছে, কেউবা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হারিয়ে যাওয়া বাড়ির দিকেই নির্বাক তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে ঘর বলতে যা বোঝায়, তা আজ নদীর তলায় চিরতরে হারিয়ে গেছে। স্কুলে যাওয়ার বদলে তারা আজ ঘর খুঁজছে—একটা নিরাপদ কোণের আশায়।

স্থানীয় বাসিন্দা , “রাতের অন্ধকারে নদীর পানি হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমার ঘরটা নদীতে তলিয়ে যায়। কিছুই বাঁচাতে পারিনি—শুধু প্রাণটা নিয়ে বের হয়ে এসেছি।”

প্রতিদিনই ভাঙনের রেখা আরও ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। নদীর তীরে থাকা বাড়িঘরগুলো এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে—কখন যে সেই ভয়াল স্রোত এসে সবকিছু কেড়ে নেয়, কেউ জানে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ সহায়তা পৌঁছালেও তা এই বিপর্যস্ত মানুষের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য যথেষ্ট নয়।

এখন এই মানুষগুলোর একটাই প্রশ্ন—
 “আমাদের পাশে কে দাঁড়াবে?”
“আমরা কোথায় যাবো? কোথায় বানাবো নতুন ঘর?”

ভোগাই নদীর ভাঙন শুধু মাটি কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে শিকড়, স্মৃতি, ভালোবাসা আর ভবিষ্যতের আশ্রয়। এই মানুষগুলো এখন একটুখানি নিরাপদ আশ্রয়ের অপেক্ষায়—একটা নতুন শুরুর আশায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়