
হাফিজুর রহমান গাজীপুর
এই তো সে দিনের কথা! নাটোরের ৭৫ বছরের এক কৃষক সাদেক আলীর গল্প শুনে আমার শিক্ষক অধ্যাপক ড. শমশের আলী স্যারের চোখ দ’টি যেন শিশুর মতো আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিস্ময়ে ভরা কণ্ঠে তিনি বললেন— “এরাই তো বাউবির আসল প্রেরণা, এরাই দূরশিক্ষার দর্পণ। তোমরা সাদেক আলীকে সম্মানিত করতে দেরি করো না”। সেই স্বপ্নই যেন সত্যি হলো আজ ৭ আগস্ট ২০২৫ রবিবার, গাজীপুরের বাউবি অডিটোরিয়ামে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম যখন সাদেক আলীর সংবর্ধনায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন বাতাসে মিশে ছিল এক অদম্য প্রেরণার সুর। তিনি বললেন—“অসুস্থ শরীর, ভাঙা পা, তবু ৭৫ বছর বয়সে বিএ পাশের এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। সাদেক আলী অদম্য যোদ্ধা—এই সমাজের বাতিঘর। হ্যাঁ, এটা কেবল ডিগ্রি অর্জনের গল্প নয়। এটা মানুষের ইচ্ছাশক্তির জয়, বয়সকে অতিক্রম করার গান, আজীবন শেখার এক অদম্য অঙ্গীকার। সাদেক আলীর নাম এখন শুধু পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গলির মোড়ে মোড়ে, চায়ের আড্ডার খোড়াক হিসেবে, প্রেরণার অনন্ত নদীর মতো। এটা শুধুই গল্প নয়, জীবনের জয়গাথা”।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) ৭৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মো. সাদেক আলী প্রামাণিককে সংবর্ধনা দিয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম। বক্তারা বলেন, বয়স কোনো শিক্ষার অন্তরায় নয়। মোঃ সাদেক আলী প্রামাণিক আজীবন শিক্ষার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাউবির শিক্ষা কার্যক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন আশীর্বাদ, তেমনি সকল বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্যও সমানভাবে উন্মুক্ত।
সংবর্ধিত শিক্ষার্থী মো. সাদেক আলী প্রামাণিক বলেন, “আমি ছোটবেলায় বাবা-মা হারিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আর্থিক সংকটে ইন্টারমিডিয়েটের পর পড়া ছাড়তে হয় এবং কৃষিকাজে মন দিয়ে পরিশ্রম করে জমিজমা, খামার ও বাগান গড়ে তুলি। ২০১৬ সালে পবিত্র হজ সম্পাদনের পর ছেলের উৎসাহে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল করি, যা জীবনে নতুন অনুপ্রেরণা এনে দেয়। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে জীবনের বড় একটি আক্ষেপ থেকে যেতো। আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। একই সাথে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষা গ্রহণের কোনো শেষ নেই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিক্ষার আলোয় নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা আমি চালিয়ে যাবো, ইনশাল্লাহ”।