প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাঙ্গাইলে বনদস্যুদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ,স্বচ্ছ তদন্তের দাবি

মোঃ আমিনুল ইসলাম,
স্টাফ রিপোর্টার:

টাঙ্গাইলের কালমেঘা সামাজিক বনে ব্যাপক গাছ কাটা ও কাঠ পাচারের ঘটনায় বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন-আবুল কালাম আজাদ স্থানীয় বনদস্যুদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেই কাঠ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার সময় সামাজিক বনের ভেতরে মাহিন্দ্রা গাড়ি ঢুকিয়ে একের পর এক বড় গাছ কেটে বিক্রি করা হয়। স্থানীয়দের হিসাবে এসব কাঠের বাজারমূল্য প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা।

অভিযোগকারীরা জানায়, সামাজিক বনের প্রতিটি প্লট থেকে বড় আকারের গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়,সরকারি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রি, অবৈধভাবে ঘর-বাড়ি করার অনুমতি দিয়ে অর্থ হাতানো, কয়লা বিক্রয় এবং সামাজিক বনের উপকারভোগীদের কাছ থেকে প্লট নবায়নের নামে মোটা অংকের ঘুষ আদায়সহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন আবুল কালাম আজাদ।

অভিযোগকারীরা আরও বলেন, এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।

ঘটনার পর শনিবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং বিকেলে টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
পরিদর্শনে প্রমাণ মিলেছে যে বেশ কিছু গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সময় স্বল্পতার কারণে সব জায়গা দেখা সম্ভব হয়নি,তবে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান।

সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই আবুল কালাম আজাদকে কালমেঘা বিটের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

একজন স্থানীয় সচেতন নাগরিক বলেন,
প্রতিটি প্লট থেকেই বড় গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। আমরা সন্দেহ করি, এ কাজে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অবৈধ যোগসাজশ রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখা জরুরি।

আরেকজন উপকারভোগীর অভিযোগ, প্লট নবায়নের নামে বাধ্য হয়ে বহু মানুষকে অর্থ দিতে হয়েছে। না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ-টাঙ্গাইল বন বিভাগ শুরুতে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তের অংশ হিসেবে স্থানীয়দের স্বাক্ষ্য,গাড়ির তথ্য এবং কাঠের চালানের কাগজপত্র যাচাই করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কালমেঘা বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান,
“গাছ কাটার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ইতোমধ্যেই সনাক্ত করা হয়েছে। আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কারা জড়িত সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করতে চেয়েও কারা কারা গাছ চুরি করেছে তাদের নাম বলতে রাজি হননি,তিনি বলেন এই চোরাই ভাবে গাছ কাটার সাথে যাঁরা জরিত তাদের সর্ব উচ্চ শাস্তি ১৫ দিন থেকে ১ মাসের জেল ও জরিমানা করা হতে পারে।”

হতেয়া রেঞ্জের কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, সামাজিক বন ও সরকারি বনভূমি দেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। তাই সেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি বা অবৈধভাবে গাছ কাটা হলে পরিবেশের পাশাপাশি উপকারভোগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।

স্থানীয়রা এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তারা চান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুধু দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার নয়, বরং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক।

টাঙ্গাইল বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত  অগ্রগতির বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেলে পরবর্তীতে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়