
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সদরপুর উপজেলা প্রতিনিধি
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের মোল্লা ডাঙ্গী গ্রামে একটি ব্রিজ প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘ সময়ে ব্রিজটি মেরামত বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, আর জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগের ছাপ।
কিছুদিন আগে এ ব্রিজের উপর সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত এবং পাঁচ-ছয়জন আহত হয়েছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্রিজটির দুরবস্থার বিষয়টি একাধিকবার প্রশাসনের নজরে আনা হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দায় সেরেছে তারা। প্রশ্ন উঠছে—এ নিয়ে কোনো পরিদর্শন বা প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে কি না। একই সঙ্গে জনগণের পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত আবেদন বা অভিযোগের প্রতিকারও মেলেনি।
এতদিনেও ব্রিজ মেরামতের জন্য কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে স্থানীয়দের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এলজিইডি বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা প্রস্তাব পাঠিয়েছে কি না তা অস্পষ্ট। এমনকি উপজেলা পরিষদ বা ইউএনও কার্যালয় থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কোনো চিঠি বা ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে কি না, সে বিষয়েও নেই নিশ্চিত তথ্য।
দিন দিন ঝুঁকি বাড়লেও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। স্থানীয়দের প্রশ্ন—প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ আহত হচ্ছে, যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে—এমন পরিস্থিতিকে কেন যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না? ব্রিজটির কারণে যদি বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা প্রাণহানি ঘটে, তবে প্রশাসন কি দায় স্বীকার করবে?
এলাকাবাসীর দাবি—কবে নাগাদ ব্রিজ মেরামতের কাজ শুরু হবে, তা প্রশাসন অন্তত একটি সময়সীমা ঘোষণা করুক। পাশাপাশি তারা অস্থায়ী সংস্কার বা বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থারও জোর দাবি তুলেছেন।
স্থানীয়দের মতে, জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা থাকলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য। তাদের প্রশ্ন—দীর্ঘদিনের এ অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশাসন কি সাংবাদিক ও জনসাধারণের সামনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে প্রস্তুত?
এলাকাবাসীর একটাই দাবি: দ্রুত ব্রিজ সংস্কার করে যাতায়াতের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।
আকোটেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন,
“ব্রিজটি ভাঙা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে, এতে এলাকাবাসীর ভোগান্তি সীমাহীন। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, শিক্ষার্থী, রোগী ও কৃষিপণ্য পরিবহনে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডিকে অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে লিখিত প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ পাওয়া যায়নি। আমি চাই দ্রুততম সময়ে এই ব্রিজটি সংস্কার বা নতুনভাবে নির্মাণ করা হোক। এটি শুধু আকোটেরচর ইউনিয়নের জন্য নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম।”
সদরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মোমিন বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কোন বাজেট নেই, ব্রিজটির বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি বাজেট পেলে ব্রিজের কাজ শুরু হবে।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা বলেন,
“আকোটেরচর ইউনিয়নের ভাঙাচোরা ব্রিজের বিষয়টি আমাদের দপ্তরের নজরে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এটি অচল অবস্থায় থাকায় আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছি এবং ইতোমধ্যে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলজিইডির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ব্রিজটি পুনঃ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাজেট অনুমোদন পেলেই দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই—এই ব্রিজের বিষয়ে প্রশাসন উদাসীন নয়, শিগগিরই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”