বিশেষ প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া(০২ নভেম্বর) :
চীনের হেনান প্রদেশের উঁচু অট্টালিকা ছেড়ে, বিত্তের ঝলমলে আলোয় মোড়া জীবন ফেলে, ওয়াং তাও এসে বসেছেন কোনাপাড়ার একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের টিনশেড ঘরে। পাশে সুমনা আক্তার—হিজাবে আবৃত, নামাজের জায়নামাজে মাথা ঠেকানো, বাংলার সাধারণ মেয়েদের মতোই ধর্মপ্রাণ। কিন্তু তার চোখে এক অদ্ভুত আলো; যেন প্রেমের আগুনে পুড়ে তার হৃদয় আরও উদার হয়েছে, ধর্মের সীমানা পেরিয়ে ভালোবাসার নদী বয়ে যাচ্ছে।
ছবিটি দেখলে মনে হয়, দুটি পৃথিবী একটি ঘরে মিশে গেছে। বাঁয়ে ওয়াং—সাদা শার্টে, হাসিতে মুখ উজ্জ্বল, যেন সূর্যের প্রথম কিরণ। ডানে সুমনা—কালো নিকাবে ঢাকা, শুধু চোখ দুটি উঁকি দিচ্ছে, যেন তারার আলোয় মোড়া রাত। মাঝে একটি লাল-হলুদ ফুলের বিছানা, যেন প্রেমের বাগানে দুটি ফুল পাশাপাশি ফুটেছে। পেছনে টিনের দেওয়াল, কাঠের দরজা—সাধারণত্বের মাঝে অসাধারণ এক মিলন।
জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের সুমনা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দুই বছর আগে একটি অ্যাপে পরিচয়। শুরুতে কথা, তারপর ভালোলাগা, অতঃপর প্রেম। ওয়াং তাও বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী হলেও ধর্মের বেড়াজালে বাঁধা নন। সুমনা ধর্মপ্রাণ, পর্দাশীল। কিন্তু ভালোবাসা তাদের মধ্যে যেন এক অদৃশ্য সেতু বেঁধেছে। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্ত। দূতাবাসের কাগজপত্র, ভিসা, ফ্লাইট—সব শেষ করে গত ৩১ অক্টোবর রাতে ঢাকায় অবতরণ। সুমনার ভাইয়েরা তাকে নিয়ে আসেনএক্স গ্রামে।
এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইচই। টিনের ঘরের সামনে ভিড়। বাচ্চারা চেঁচাচ্ছে, “চাইনিজ ভাইয়া!” বুড়োরা বলাবলি করছে, “প্রেমে এমনও হয়?” মেয়েরা ফিসফিস করে, “সুমনা কী সাহসী!” ওয়াং তাও হাসছেন, হাত নাড়ছেন। সুমনা পর্দার আড়াল থেকে চোখ তুলে দেখছেন—তার স্বপ্ন এসে দাঁড়িয়েছে সামনে।
সুমনা বলেন, “ওয়াং খুব ভালো মানুষ। আমার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে। প্রয়োজনে ইসলাম গ্রহণ করবে।” ওয়াং বলেন, “সুমনার ভালোবাসা আমাকে এখানে টেনে এনেছে। এই গ্রাম, এই ঘর—সবই আমার।” তার চোখে এক অদ্ভুত শান্তি, যেন সে হারিয়েছে অনেক, পেয়েছে তার চেয়ে বেশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মুসলিম রীতিতে বিয়ে হবে। কাজী আসবেন, দুই পরিবারের স্বাক্ষী থাকবেন। তারপর মধুচন্দ্রিমা—হয়তো এই গ্রামেই, নয়তো চীনে। এলাকাবাসী অপেক্ষায়। কেউ বলছে, “বিয়ে দেখব।” কেউ বলছে, “মধুচন্দ্রিমা কোথায় হবে?” যেন তাদের নিজেদের ছেলে-মেয়ের বিয়ে।
নাসিরনগর থানার ওসি জনাব মাকছুদ আহমেদ জানান, “বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।” কুন্ডা বিটের এসআই জাহান-ই-আলম বলেন, “পাসপোর্ট দেখেছি। সব ঠিক আছে।” পুলিশের তরফ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ ভিড় বাড়ছে।
এই প্রেম যেন একটি গল্প—দুটি দেশ, দুটি সংস্কৃতি, দুটি ধর্মের মাঝে একটি হৃদয়ের জয়গান। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ছে, কিন্তু ভেতরে যেন বসন্ত লেগেছে। ওয়াং তাও এসেছেন, থাকবেন। সুমনা বলছেন, “আমার জীবন এখন পূর্ণ।” এলাকাবাসী হাসছে, অপেক্ষা করছে—কবে বাজবে বিয়ের সানাই।তবে এ প্রেম কি সুমনাকে সুখী করতে পারবে?নাকি অপেক্ষা করছে সুমনার জন্য কোন প্রতারণার ফাঁদ?কেননা ইতিপূর্বে প্রেমের টানে
বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে চীনে নিয়ে গিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করার নজির রয়েছে।