প্রকাশিত : ০৬ জুলাই, ২০২৫, ১২:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে যুবদল নেতা জাহিদ মোড়ল, ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

মোঃ ইব্রাহিম, স্টাফ রিপোর্টারঃ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন মোড়লকে আকস্মিক বহিষ্কারের ঘটনায় মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরে বাংলা নগর ও ঢাকা মহানগর উত্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জাহিদ মোড়ল দলের ভেতর ও বাইরে থেকে আসা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং তাকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত যুবদল, বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সংগঠন। জাহিদ হোসেন মোড়ল দীর্ঘদিন ধরে এই সংগঠনের আদর্শকে বুকে ধারণ করে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করে আসছিলেন। তবে, তার অনুসারীরা মনে করেন, তাদের মতো অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলে তা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে মাঠ দখলের সুযোগ করে দেবে। মূলত এই আশঙ্কার জেরেই জাহিদ মোড়লের বিরুদ্ধে একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা।

গত ৩ জুলাই জাহিদ হোসেন মোড়লকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকার বিএনপি-আদর্শের নেতাকর্মীদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তারা বলছেন, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন নেতাকে কোনো কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে এভাবে বহিষ্কার করা রীতিবিরুদ্ধ। এতে একদিকে যেমন দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোবলও ভেঙে পড়ছে। সম্প্রতি, ২৭ মে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে জাহিদ হোসেন মোড়লসহ মোহাম্মদপুরের বেশ কয়েকজন নেতাকে জড়িয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, মোহাম্মদপুর টাউন হলে ব্যবসায়ী মনির আহমেদের অফিসে ঢুকে সন্ত্রাসীরা চাঁদা চেয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালায়। প্রতিবেদনে একাধিক বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ করে তাদের ‘সাবেক ছাত্রদল নেতা পিচ্চি হেলালের লোক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে, ওই ব্যবসায়ী পরবর্তীতে কোনো গণমাধ্যম কর্মীর কাছে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের নেতার নাম উল্লেখ করেননি বলে জানা যায়। তিনি একজন সাংবাদিককে জানান যে তিনি কারো নাম বলেননি, কিন্তু কিছু সংবাদমাধ্যম বিএনপি’র কয়েকজন নেতাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

এই সংবাদের প্রতিবাদে ৩০ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহিদ হোসেন মোড়ল। তিনি সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকেই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির জন্ম এবং এর মূল হোতা হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানককে দায়ী করেন।

জাহিদ মোড়ল দাবি করেন, মোহাম্মদপুর থেকে শুরু হলেও কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এসব গ্যাংকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তিনি আরও বলেন, একসময় মোহাম্মদপুর ছিল সন্ত্রাসের জনপদ, এবং দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে নানক ও তার বাহিনীর ক্যাডাররা সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে আসছিলেন। কিশোর গ্যাংগুলো যত অপরাধ করে, সেগুলোর দায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর ওপর চাপানো হচ্ছে, অথচ এই বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না।

জাহিদ হোসেন মোড়লের একটি দীর্ঘ ও বর্ণাঢঢ্য রাজনৈতিক জীবন রয়েছে। তিনি ১৯৯৮ সালে তৎকালীন ৪৫ (বর্তমান ৩২) নং ওয়ার্ডের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি জিয়া মঞ্চ, মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক এবং ২০০২ সালে তৎকালীন ৪৫ (বর্তমান ৩২) নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি মোহাম্মদপুর থানা যুবদলের সমন্বয়ক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি মোহাম্মদপুর থানা যুবদলের সভাপতি হন এবং ২০২৫ সালে ঢাকা মহানগর উত্তরের যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

সরেজমিনে খোঁজ নিলে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, “জাহিদ হোসেন মোড়ল একদিনে তৈরি হননি। তিনি রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে একজন পরীক্ষিত সৈনিক। গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ বিরোধী সকল কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন। জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে এখনো দলের ভেতর ও বাইরে থেকে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজনীতিতে ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে, কিন্তু একজন মাঠের নেতাকে এভাবে সরাসরি বহিষ্কার না করে অন্তত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া যেত। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এই বহিষ্কারাদেশের ফলে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের নেতাকর্মীরা শুধু হতাশই নন, তারা মনে করছেন এটি দলের ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে”।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়