প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘কে রক্ষা করছে মাদক সিন্ডিকেটকে?’—সদর দক্ষিণে তদন্তের চাহিদা, আতঙ্কিত এএসআই সোলায়মানের কাহিনি

আলাউদ্দিন | সিনিয়র রিপোর্টার

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) সোলায়মান বাদশা-এর বিরুদ্ধে স্থানীয় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ঘুষ গ্রহণ এবং আইনের অপব্যবহার করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
আমাদের অনুসন্ধান টিমের হাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি গত ৩৬ মাস ধরে একই থানায় দায়িত্ব পালন করছেন, যা পুলিশের রোটেশন নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি স্থানীয় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


 সাপ্তাহিক ঘুষের অভিযোগ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এএসআই সোলায়মান বাদশা প্রতি সপ্তাহে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫,০০০ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেন।
ধরা যাক, মাসে ৪ সপ্তাহ—তাহলে একজনের কাছ থেকে মাসে ২০,০০০ টাকা।
আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অন্তত চারজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি মাসে প্রায় ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।
কিছু সূত্রের দাবি, এই সংখ্যাটি আরও বড়—দশজনেরও বেশি মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করা হচ্ছে।


চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা

আমাদের মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান টিম যেসব কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীর নাম নিশ্চিত করেছে, তারা হলেন—

1. জয়নগর মাঠের মাসুদ – এলাকায় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।


2. জয়নগর মাঠের মনির – এলাকাবাসীর কাছে “এলাকার ত্রাস” নামে পরিচিত।


3. গোয়ারঘাটের জয়নাল আলে – যার অত্যাচারে অতিষ্ঠ স্থানীয় মানুষ।


4. মথুরাপুরের জয়নাল – যাকে চিনে না সদর দক্ষিণ থানার কোনো পুলিশ সদস্য প্রায় নেই।


আইনের রোল ভঙ্গের অভিযোগ

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা একই থানায় টানা ৩৬ মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
দীর্ঘ সময় একই এলাকায় থাকলে স্থানীয় অপরাধচক্রের সঙ্গে আপোষমূলক সম্পর্ক তৈরি হয়—যা পুলিশের নিরপেক্ষতা ও সততার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তাদের ভাষায়—

> “রোটেশন নীতি কঠোরভাবে না মানলে নিচু পর্যায়ে অনিয়ম আরও বাড়বে।”


 স্থানীয়দের ক্ষোভ

স্থানীয়দের অভিযোগ, এএসআই সোলায়মান বাদশা সাধারণ মানুষের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, এমনকি বিনা কারণে হাত তোলেন।
একজন ভুক্তভোগীর ভাষায়—

> “যদি কেউ অপরাধী হয়, মামলা দিন, কোর্টে পাঠান। কিন্তু নিরীহ মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন?”

 

অফিসারদের রহস্যজনক নীরবতা

এই বিষয়ে সাংবাদিক ফোন করেন সদর দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম আহমদ-এর কাছে। তিনি প্রথমে ফোন রিসিভ করে বলেন—

> “ভাইজান কেমন আছেন?”
কিন্তু সাংবাদিক প্রথম প্রশ্ন করতেই তিনি ফোনটি কেটে দেন।

 

অভিযুক্ত এএসআই সোলায়মান বাদশাও প্রথম ফোনটি রিসিভ করলেও প্রশ্ন শুরু হতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এরপর সাংবাদিক যোগাযোগের চেষ্টা করেন সদর দক্ষিণ সার্কেল অফিসার ফেরদৌস সাহেব-এর সঙ্গে।
কিন্তু তিনি পূর্বে আরেক দুর্নীতি মামলার (এএসআই জামশেদ ও কনস্টেবল আমানের ৩ লক্ষ টাকার কেলেঙ্কারি) বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ব্ল্যাকলিস্ট করে রাখেন।
পরবর্তীতে ডিরেক্ট ফোনে তিনবার যোগাযোগের পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম-এর সঙ্গেও দু’দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।


 প্রশ্নগুলো রয়ে গেল অধরা…
এএসআই সোলায়মান বাদশার কাছে পাঁচটি প্রশ্ন:

1. আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে— স্থানীয় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ গ্রহণ করছেন। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?


2. অভিযোগ রয়েছে, আপনি একই থানায় টানা ৩৬ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন, যা নিয়মবিরুদ্ধ। আপনি কীভাবে এই দীর্ঘ সময় ধরে একই থানায় থেকে কাজ করছেন?


3. স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আপনি নিরীহ মানুষদের সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলেন এবং বিনা কারণে হয়রানি করেন। এই অভিযোগ আপনি অস্বীকার করবেন, নাকি স্বীকার করছেন?


4. আপনার নাম এসেছে স্থানীয় চারজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে—এই সম্পর্কগুলো কি কেবল তথ্যসূত্র হিসেবে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?


5. জনগণের দাবি, আপনার কার্যক্রমের কারণে থানার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন, এসব অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নাকি কিছু সত্যতা আছে?


 সদর দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন:

1. একই থানায় টানা ৩৬ মাস দায়িত্ব পালন করা নিয়মবিরুদ্ধ — এএসআই সোলায়মান বাদশা কেন এত দীর্ঘ সময় ধরে সদর দক্ষিণ থানায় রয়েছেন? উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কি এই বিষয়ে অবগত?


2. স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। থানার পক্ষ থেকে কি কোনো অভ্যন্তরীণ তদন্ত বা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?


3. সোলায়মান বাদশার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগ রয়েছে— গালিগালাজ, হয়রানি ও অনৈতিক আচরণের। থানার কর্তৃপক্ষ কীভাবে এসব অভিযোগ যাচাই করছে?


4. মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে— আপনি কি মনে করেন, থানার কিছু সদস্যের সঙ্গে সিন্ডিকেটের যোগসাজশ আছে?


5. মাঠপর্যায়ে পুলিশের সুনাম রক্ষায় সদর দক্ষিণ থানা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগ আর না ওঠে?

 


সদর দক্ষিণ সার্কেল অফিসারের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন:

1. একই থানায় টানা ৩৬ মাস দায়িত্ব পালন— এটি পুলিশ রোটেশন নীতির পরিপন্থী। সোলায়মান বাদশা এতদিন ধরে একই জায়গায় কীভাবে দায়িত্বে আছেন—এটি কি প্রশাসনিক ত্রুটি, নাকি বিশেষ কোনো কারণ?


2. মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সার্কেল অফিস হিসেবে আপনারা কি কোনো অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছেন?


3. স্থানীয় সূত্র বলছে, থানার কিছু সদস্য মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে—এই অভিযোগের বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?


4. নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গালিগালাজের অভিযোগ এসেছে একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারে আপনার দফতর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?


5. আপনি কি মনে করেন, সদর দক্ষিণ থানায় একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত, যাতে এসব অভিযোগের সত্যতা নির্ধারণ করা যায়?


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন:

1. সদর দক্ষিণ থানার এএসআই সোলায়মান বাদশা সম্পর্কে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে— উর্ধ্বতন পর্যায়ে কি কোনো তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে বা হচ্ছে?


2. একজন কর্মকর্তা একই থানায় টানা ৩ বছর থাকা কি নিয়মবিরুদ্ধ নয়? এই দীর্ঘস্থায়ী দায়িত্ব পালনের পেছনে প্রশাসনিক কারণ নাকি প্রভাবশালী মহলের তদবির— আপনি কীভাবে দেখছেন?


3. স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছে, কিছু পুলিশ সদস্য মাদক সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সাপ্তাহিক সুবিধা নিচ্ছে। আপনি কি কখনও এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন অনুসন্ধান করেছেন?


4. যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, এএসআই সোলায়মান বাদশার বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে?


5. পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও জনআস্থা পুনরুদ্ধারে সার্কেল পর্যায়ে কী মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যাতে অনিয়ম আগেই শনাক্ত করা যায়?

 


চলমান অনুসন্ধান

আমাদের অনুসন্ধান টিম এখনও কাজ করছে এএসআই সোলায়মান বাদশার আর্থিক লেনদেন, স্থানীয় মাদক সিন্ডিকেটের সংযোগ এবং থানার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদন শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

আমাদের পরবর্তী প্রতিবেদন—
“কে রক্ষা করছে সদর দক্ষিণ থানার মাদক সিন্ডিকেট?”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়