শাহনাজ বেগমঃ
মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র ইদ্রাকপুর কেল্লার পাশে দৃষ্টিনন্দনভাবে নির্মিত ' মুক্তমঞ্চ’ এখন উপেক্ষিত এক স্থানে পরিণত হয়েছে। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে হয়নি একটি অনুষ্ঠানও। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই সাংস্কৃতিক মঞ্চটি এখন কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীদের আড্ডায় রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই মুক্তমঞ্চটির উদ্বোধন করা হয়। পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, এখানে সাহিত্য, সংগীত, নাটক, আবৃত্তি ও বিতর্কসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অবাধ সুযোগ থাকবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য মঞ্চটি উন্মুক্ত থাকবে৷ দর্শকদের জন্য সামনে নির্মাণ করা হয় ৯ ধাপ বিশিষ্ট বসার স্থান এবং রাতে মনোরম পরিবেশ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কাচ দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় অ্যাকোরিয়াম।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মঞ্চটির পূর্বপাশের গেট ভেঙে প্রবেশের পথ করে ফেলা হয়েছে। নিয়মিত বসে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের আড্ডা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর এখানে মাদক সেবন চলে অবাধে। নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় এলাকাবাসী এখন এই মঞ্চ ঘেঁষে চলাফেরা করতেও ভয় পান।
স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বলেন.... “শুধু স্ট্যাচু বানিয়ে আর ফিতা কেটে উন্নয়ন হয় না। এই মঞ্চটি আমরা ভেবেছিলাম আমাদের সন্তানদের মঞ্চে গাইতে দেখব, কবিতা আবৃত্তি করতে দেখব। এখন তো দেখছি ওখানে গিয়ে তারা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।”
মুন্সীগঞ্জের এক সাংস্কৃতিক কর্মী বলেন, “আমরা বছরের পর বছর নাটক করি, আবৃত্তি করি—কিন্তু এত সুন্দর একটি মঞ্চ পেয়েও আমাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি জেলার প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতাও আসেনি।”
একজন কলেজছাত্রী বলেন, “প্রতিদিন দেখছি, এখানে কিছু ছেলে বসে থাকে। অনেকেই অশ্লীল ভাষায় কথা বলে। মঞ্চের পরিবেশটাই নষ্ট করে ফেলেছে।”
উদ্বোধনের মাত্র দশ দিন পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বদলি হয়ে যান। দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। কিন্তু তিনিও মঞ্চটির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেননি।
মুন্সীগঞ্জে বর্তমানে শতাধিক নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। যারা বছরের পর বছর ধরে নাটক, সংগীত, কবিতা, বিতর্কসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত। কিন্তু উপযুক্ত মঞ্চ না পাওয়ায় তাদের অনেকেই জেলা থেকে বাইরে গিয়ে অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাংস্কৃতিক কর্মীরা জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,
“মঞ্চটি দ্রুত সংস্কার ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এটি শুধু একটি মঞ্চ নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব ও মূল্যবোধের প্রতীক হতে পারে।”
বরং দেখা যায়, ৫ আগস্ট ২০২৪ এ সরকার পরিবর্তন হলেও এখানে এখনও রয়ে গেছে নামফলক ' মুজিববর্ষ মুক্তমঞ্চ '। এই মুক্তমঞ্চটি কেবল একটি অব্যবহৃত স্থাপনা নয়, এটি জেলা প্রশাসনের নজরদারি ও পরিকল্পনার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় এসেছে—এই মঞ্চটিকে সত্যিকারের "মুক্তমঞ্চ" বানিয়ে জনসাধারণের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সহকারী কমিশনার খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন করা হবে।