প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২৫, ১০:০১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রানা দেখালেন চেষ্টা থাকলে নিউইয়র্কও জয় করা সম্ভব

সাজেদুল হক প্রান্ত, রিপোর্টার

লাখো মানুষের স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলা শহর নিউইয়র্ক। সেই শহরের অন্যতম সম্মানজনক জায়গায়, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে (NYPD), এখন দায়িত্ব পালন করছেন এক বাংলাদেশি তরুণ Abu Yousuf (Rana)। ছোটবেলার স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর দৃঢ় মনোবলের মধ্য দিয়ে Rana পৌঁছেছেন এমন এক জায়গায়, যা শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য এক গর্বের নাম।

Rana’র শেকড় বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কীর্তিনগর গ্রামে। তবে বেড়ে ওঠা ঢাকার মধ্য বাড্ডায়। পরিবারে সবার ছোট রানা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন স্বপ্নবাজ। বড় ভাই জুয়েল রানা আগেই NYPD-তে যোগ দিয়ে একটি পথ দেখিয়েছিলেন, যা ছোট ভাই Rana-কে দিয়েছিল অনুপ্রেরণা। তবে শুধু অনুপ্রেরণা নয়, Rana’র নিজের ভেতরেও ছিল একটা লক্ষ্য- কিছু করে দেখানোর, কিছু হয়ে ওঠার।

২০১৩ সালে এইচএসসি পাশ করে ২০১৪ সালে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ভর্তি হন নিউ ইয়র্ক সিটির CityTech-এ, Information Technology বিষয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু সেখানে গিয়েই বুঝলেন, এই নতুন দেশে নিজের জায়গা তৈরি করা সহজ নয়। নতুন ভাষা, নতুন সমাজ, অচেনা পরিবেশ- সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন।

২০১৭ সালে NYPD-এর ক্যাডেট প্রোগ্রামে যুক্ত হন Rana। পরবর্তী সাত বছর এই প্রোগ্রামে কাজ করে তিনি কেবল পুলিশ বাহিনীর কাঠামো বুঝেই নেননি, বরং আত্মস্থ করেছেন পেশাদারিত্ব, দায়িত্ববোধ, মানুষের পাশে দাঁড়ানো আর কমিউনিটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার মূলনীতি।

২০২০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন, যা তার যাত্রায় ছিল একটি বড় মাইলফলক। এরপর বহু প্রতীক্ষার পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে তিনি NYPD-এর অফিসিয়াল সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে ট্রেনিংয়ের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের মে মাসে নিউইয়র্ক শহরে একজন পূর্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।

Rana’র গল্প শুধু একজন তরুণের স্বপ্নপূরণের গল্প নয়। এটি হাজারো বাংলাদেশি তরুণের কাছে এক বাস্তব উদাহরণ- যে কেউ চাইলে, চেষ্টার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে পারে।

Abu Yousuf (Rana) বলেন, আমি আমার বাংলাদেশি পরিচয়ে গর্ব করি। আমি চাই প্রবাসে থেকেও দেশের সেবা করতে, দেশের মানুষকে সম্মানিত করতে। আমি NYPD-তে কাজ করলেও সব সময় আমার কমিউনিটির সঙ্গে থাকতে চাই, তাদের পাশে থাকতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই।

এই গর্ব শুধু রানার নয়, বরং তার পরিবারেরও। কারণ, তার বড় ভাই জুয়েল রানাও বর্তমানে NYPD-এর একজন সদস্য। একই পরিবারে দুই ভাই নিউইয়র্ক পুলিশের সদস্য- এ এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ, যা আরও অনেক প্রবাসী তরুণকে সাহস জোগাবে।

Abu Yousuf (Rana) প্রমাণ করেছেন, কঠিন পরিশ্রম, ধৈর্য, সততা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে সীমান্ত মানুষকে থামাতে পারে না। ভাষা, সংস্কৃতি কিংবা অবস্থান- কিছুই বাধা হতে পারে না যদি মনটা পরিষ্কার থাকে এবং চোখের সামনে থাকে একটা স্বপ্ন।

রানা দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের একজন তরুণ নিউইয়র্ক শহরের ব্যস্ত রাস্তায় পুলিশ অফিসার হিসেবে গর্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে। তার এই যাত্রা এক অনুপ্রেরণার নাম- যা অনেকের হৃদয়ে আলো জ্বালাবে, সাহস দেবে নতুন করে পথচলার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়