মাইদুল হক মিকুঃ
গাজায় আবারও শুরু হয়েছে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা। দক্ষিণ রাফায় গুলি বিনিময়ের পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে চালানো নতুন হামলায় অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এ ঘটনায় একজন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে বড় সহিংসতা।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে। ফলে তারা নিখোঁজ বন্দীদের মৃতদেহ হস্তান্তরের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, এই হামলা মৃতদেহ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানকে বিপর্যস্ত করবে এবং গাজায় অবশিষ্ট বন্দীদের দেহ উদ্ধারে বিলম্ব ঘটাবে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর গাজার সাবরা পাড়ায় এক আবাসিক ভবনে হামলায় চারজন ও দক্ষিণ খান ইউনিসে আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতালের কাছাকাছি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলার দায় হামাসের ওপর চাপিয়ে বলেছেন, “সৈন্যদের ওপর হামলার জবাবে হামাসকে বড় মূল্য দিতে হবে।”
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, হামলার আগে ওয়াশিংটনকে আগাম অবহিত করেছিল তেল আবিব।
গাজার সরকারি তথ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে মানবিক সহায়তার প্রবাহও কঠোরভাবে সীমিত করে রাখা হয়েছে।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, চলমান বোমাবর্ষণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। সংগঠনটি চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুত থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গাজার হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি বলেন, “আমরা যতটা সম্ভব মৃতদেহ উদ্ধার করার চেষ্টা করছি, কিন্তু প্রতিটি বিলম্বের জন্য দায় ইসরায়েলের।”
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের গবেষক মুহাম্মদ শেহাদা বলেন, “নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবেই যুদ্ধবিরতির সীমা পরীক্ষা করছেন এবং গাজায় নতুন করে গণহত্যার জন্য যুক্তি তৈরি করতে চাইছেন।”
অন্যদিকে ইসরায়েলি বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ মনে করেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক মিত্রদের গভীর সম্পৃক্ততার কারণে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম।”
কাতার থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র গাজার ঘটনাপ্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের অনুমোদন ছাড়া ইসরায়েল বড় কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল এখন এমন এক “নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিরতি” বজায় রাখতে চাইছে, যেখানে তারা নিজেদের শর্তে হামলা চালাতে পারবে এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখবে।