প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আজ ভাঙছে সাধুর হাট

মো:এমদাদুল হক,
ব্যুরো প্রধান,কুষ্টিয়া


কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়াবাড়িতে আজ শেষ হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সাধুসঙ্গ। এ বছরই প্রথমবারের মতো এই সাধুসঙ্গ রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজন করা হয়, যা বাউল দর্শন ও আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

শুক্রবার বিকেলে রাখাল সেবা ও রাতে অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের সাধুসঙ্গ। শনিবার সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা শেষে মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আজ রাতে লালন মঞ্চে গান ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটবে।

গতকাল থেকেই গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে আখড়াবাড়ি ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন সাধু-বাউল ও অনুসারীরা। তবে বিদায়ের মাঝেও রয়ে গেছে প্রতিশ্রুতি— আবার মিলিত হওয়ার, আবার ফিরে আসার।

যদিও সাধুসঙ্গ শেষ, তবুও আজ রাতেও আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে থাকবে লালনের গান, দর্শন ও আলোচনার পর্ব। এজন্য অনেক সাধু-বাউল এখনো অবস্থান করছেন সাঁইজির সান্নিধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লালন দর্শনের প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। ফলে এবারের আয়োজনে ছিলো অতীতের তুলনায় বেশি দর্শনার্থীর ভিড়।

দর্শনার্থীরা জানান, লালনের মানবতাবাদী ও অহিংস দর্শন দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তরুণ প্রজন্মের মাঝেও তাঁর ভাবধারা, গান ও জীবনবোধের প্রতি গভীর আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন,“এ আয়োজন কেবল আধ্যাত্মিক নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও প্রতীক। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।”

১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১লা কার্তিক (ইংরেজি ১৭৯০ সালের অক্টোবর মাসে) দেহত্যাগ করেন ফকির লালন সাঁই। সেই থেকে প্রতিবছর এই সময় তাঁর অনুসারীরা আয়োজন করে সাধুসঙ্গ ও স্মরণোৎসব।

আজও সেই শতবর্ষীয় ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে বিদায়ের গান গেয়ে ফিরে যাচ্ছেন সাধু-বাউলরা— রেখে যাচ্ছেন লালনের ভালোবাসা, মানবতার বার্তা আর চিরন্তন দর্শনের উত্তরাধিকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়