প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাগুরায় আইনজীবীর মিথ্যা মামলায় পুলিশ সদস্যকে হয়রানির অভিযোগ। 

মোঃ তারিকুল ইসলাম তুহিন, জেলা প্রতিনিধি, মাগুরাঃ

অভিযুক্ত আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রাশেদ মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামের মোঃ ওহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে এবং মাগুরা জজ আদালতে প্রকটিস করেন। নিজে বাদী হয়ে ওই পুলিশ সদস্য সহ আরোও একজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলাটি করেন তিনি। (আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রাশেদের দায়ের করা মামলার আসামি) ভুক্তভোগী ওই পুলিশ সদস্যের নাম মোঃ মোরশেদ আনোয়ার। তিনি একই গ্রামের আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে। রাশেদের দায়েরকৃত মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন ঐ পুলিশ সদস্য। 
ভুক্তভোগী ঐ পুলিশ সদস্য  জানান, এ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম রাশেদ তার প্রতিবেশী। রাশেদের ভাই সাইফুল দীর্ঘদিন যাবত মালয়েশিয়া প্রবাসী। এই রাশেদ উকিল মাগুরা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে লোক জোগাড় করে। এ কাজে তাকে একই গ্রামের রতন সহযোগিতা করে। তার মালয়েশিয়া থাকা ভাইয়ের মাধ্যমে  তারা বিদেশে লোক পাঠায়। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে এবারও বেশ কিছু লোকের নিকট থেকে তারা পাসপোর্ট  জমা নেয় এবং টাকা নেয়। বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলোর কয়েকটি ধাপ( মেডিকেল, কলিং ইত্যাদি) ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ করান। এর মধ্যে কয়েকজন বিদেশে চলেও যায়। রাশেদের প্রতিবেশী হওয়ায় এই ঘটনাগুলো আমরা জানি। এবং গ্রামের অধিকাংশ লোকই জানে যে রাশেদ এবং রতন তার ভায়ের মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠায়। বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে  জমা দেওয়া কিছু পাসপোর্ট ঢাকার একটা এজেন্সিতে আটকে গেলে রাশেদ আমাকে ফোন করে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পাসপোর্টগুলো ছাড়ানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ করে। রাশেদ আমার প্রতিবেশী এবং বন্ধু হওয়ায় এবং সেই সময় আমি ঢাকায় অবস্থান করায় এবং তার অনুরোধে আমি সংশ্লিষ্ট এজেন্সিতে তাদের সাথে কথা বলে পাসপোর্ট গুলো ছারানোর ব্যবস্থা করি। এবং পরবর্তীতে সেই পাসপোর্টগুলো আমার মামাতো ভাই লিমনের মাধ্যমে রাশেদের নিকট পৌঁছে দেই।(পাসপোর্টগুলো হস্তান্তর  করার মুহূর্তের কিছু স্থিরচিত্র সংরক্ষণ করা আছে)।বিদেশে লোক পাঠানো ওই সিন্ডিকেটের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি সরকারি চাকরি করি, আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ব্লাকমেইল করে আমার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে রাশেদ উকিল। রাশেদ অথবা বিদেশ যাত্রী কারোও নিকট থেকে আমি কোন টাকা নেইনি। রাশেদের অনুরোধে পাসপোর্টগুলো ছাড়ানোর জন্য আমি তাকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। এছাড়া মামলার  সাক্ষীগণের নিকট থেকে স্ট্যাম্প করে কোন টাকা তিনি গ্রহন করেন নি বলেও জানান তিনি। 
মামলার অপর আসামি রতন এক ভিডিও বার্তায় জানান, রাশেদের মাধ্যমে তার মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাই সাইফুল তাকে মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। মালয়েশিয়া থেকে কিছুদিন পর ফিরে এসে সে রাশেদের সহযোগী হিসাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর লোক জোগাড় করেন এবং রাশেদের নির্দেশেই তিনি যাদের থেকে পাসপোর্ট জমা নেয়া হয়েছে এবং ঢাকার এজেন্সির সাথে  নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বিদেশ যাত্রার প্রক্রিয়াকরণের টাকা রাশেদ তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে বিভিন্ন সময় এজেন্সিতে পাঠাতেন। নগদ বা ব্যাংক একাউন্টে কোন টাকা মোর্শেদকে রাশেদ দিয়েছেন এমন তথ্য তার জানা নাই। 

যে আটটি পাসপোর্ট বই মোরশেদ আর্থ-এয়ার এজেন্সি থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন সেই পাসপোর্ট ধারীদের মধ্যে একজন দারিয়াপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে জামিরুল জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য রাশেদের নিকট তিমি পাসপোর্ট বই এবং দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশ যেতে পারেননি। পরবর্তীতে রাশেদ তার পাসপোর্ট বইটি এবং এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। মোরশেদকে তিনি কোন টাকা পয়সা দেননি। 
একই গ্রামের এবং বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়া আরমানের পিতা আলেফ জানান, তার ছেলের বিদেশে যাওয়ার জন্য রতনের নিকট পঞ্চাশ হাজার এবং রাশেদের মায়ের নিকট ২ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলেন। তার ছেলে বিদেশ যেতে না পারায় রাশেদ  তার টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে।
পাসপোর্ট এবং টাকা জমা দেওয়া একই গ্রামের রাকিব জানান, বিদেশ যাওয়ার জন্য মোরশেদের নিকট তিনি কোন টাকা দেননি। রাশেদের সাথে যোগাযোগ করে তিনি টাকা দিয়েছিলেন। প্রায় এক বছর ঘোরানোর পর রাশেদ  তার পাসপোর্ট  এবং টাকা ফেরত দিয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম রাশেদের ভাই সাইফুল ইসলাম বেশ কিছুদিন যাবত মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে সাইফুল মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইডে শ্রমিক সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতনের একটা অংশ কমিশন হিসাবে সাইফুল পেয়ে থাকেন। যে সব শ্রমিক  মালয়েশিয়ায় নিয়ে কাজের ব্যবস্থা করে দেন সাইফুল সেই শ্রমিক জোগাড় করেন  রাশেদে এবং তার সহযোগী রতন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে  মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক এমন লোকজন রাশেদের কাছে আসতে দেখা যায় বলেও জানান স্থানীয়রা। 
এছাড়া অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম রাশেদ সম্প্রতি তার নিজ এলাকায় এবং মাগুরা জজ কোর্টের পাশে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি ক্রয় করেছেন, যা ২-৩ বছর প্র্যাকটিস করা জেলা জজ আদালতের  একজন আইনজীবীর বৈধ আয়ের সাথে কোনভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলছেন সচেতন মহল। 
মামলার বাদী এ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম (রাশেদ) জানান, রতন এবং মোরশেদ বিদেশ যাত্রীদের নিকট  থেকে টাকা এবং পাসপোর্ট বই নিয়েছেন। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে তারা জড়িত। মোরশেদ, রতন, এবং পাসপোর্ট জমা দিয়ে ব্যক্তিরা আমার নিজ এলাকায় হওয়ায় রতন  এবং মোরশেদ কে টাকা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিদেশ যাত্রীরা আমার কাছে জিজ্ঞেস করলে আমি তাদেরকে টাকা দিতে সম্মতি দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ওই পাসপোর্টধারীদের টাকা আমি ফেরত দিয়েছি এবং টাকা ফেরত দেওয়ার সময় প্রমাণ হিসাবে স্ট্যাম্প করে রেখেছি। সম্প্রতি তার নিজ এলাকায় এবং মাগুরা শহরে কয়েক কোটি টাকার জমি ক্রয়ের  অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। পাসপোর্ট জমা দানকারীদের মধ্যে একজন  আরমানের বাবা আলেফ তার মামা  হওয়ায় রতনের অনুপস্থিতিতে তার মায়ের কাছে টাকা দিয়েছিলেন। পরে রতন সেই টাকাগুলো নিয়ে যায় বলে জানান ওই আইনজীবী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়