এনামুল হক আরিফ
ব্যুরো চিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার দেওড়া গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। চম্পকনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিয়া আক্তার (১৬) প্রেমের প্রলোভনে অপহরণ ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর গত ২৭ অক্টোবর সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এই কিশোরী।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ,পরিবারের অভিযোগ, উপজেলার কালারট গ্রামের প্রবাসী আবু তাহেরের মেয়ে রিয়া প্রতিদিনের মতো স্কুলে যেত। স্থানীয় বখাটে যুবক সজল মিয়া (২৩) ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে রিয়াকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। পরিবার বিষয়টি জানালে উল্টো অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরা তা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেয়।
এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে রিয়া তার নানার বাড়ি দেওড়া গ্রামে বেড়াতে গেলে, পরিকল্পিতভাবে সজল মিয়া ও তার সহযোগীরা প্রেমের প্রলোভনে ফুসলিয়ে রিয়াকে রাতের আঁধারে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়, চাপাতি ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করা হয়।
রক্তাক্ত রিয়ার নিস্তেজ দেহ,১২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অচেতন অবস্থায় রিয়াকে গ্রামের একটি নির্জন রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভোরে পথচারীরা রক্তাক্ত রিয়াকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও পরিবারের কাছে খবর দেয়।
চাচা আবুল বাশার ছুটে গিয়ে দেখেন, তার ভাতিজি নিস্তেজ দেহে মাটিতে পড়ে আছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“রিয়াকে যখন তুলে নিলাম, তখন ওর নিঃশ্বাস খুব ধীরে চলছিল। ওর শরীরে একফোঁটা শক্তি ছিল না।”জীবন-মৃত্যুর লড়াই, অবশেষে পরাজয়
আহত অবস্থায় রিয়াকে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় (রেজি. নং ৩৯৩০৫, তারিখ ১২/০৯/২৫)। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা জানান, মাথায় গভীর আঘাতে খুলির হাড় ভেঙে গেছে। রক্তক্ষরণ ও শকজনিত কারণে রিয়ার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হতে থাকে।
প্রায় তিন সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ২৭ অক্টোবর রাতে রিয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।পরিবারের কান্না ও ক্ষোভ
চাচা আবুল বাশার কাঁদতে কাঁদতে বলেন,“আমার ভাই প্রবাসে, মা নেই। ছোট এই মেয়েটা আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে নিভে গেল। যারা রিয়াকে অপহরণ করে নির্যাতন করেছিল, তারা এখনও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা বিচার চাই—ওদের ফাঁসি চাই।”পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন,পরিবারের অভিযোগ—ঘটনার পর সরাইল থানায় অভিযোগ দাখিল করা হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও অর্থবান হওয়ায় আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
এ বিষয়ে সরাইল থানা পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।নীরব গ্রামের বুকভাঙা হাহাকার,দেওড়া গ্রামের মানুষজন এখনও স্তব্ধ। স্কুলের সহপাঠীরা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলছে,
“রিয়া আমাদের সাথে বসত, হাসত, স্বপ্ন দেখত। আজ তার বেঞ্চটা খালি।”একটি প্রাণ, এক পরিবারের আলো—কিছু নৃশংস মানুষের বিকৃত মানসিকতার শিকার হয়ে নিভে গেল অকালে।এলাকাবাসীর দাবি—“রিয়ার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে আর কোনো রিয়া এভাবে হারিয়ে না যায়।”