হাফিজুর রহমান গাজীপুর
গাজীপুরের শ্রীপুরে আবারও ঘটল হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা বিএনপি কর্মী শামীম প্রধানের লালসার শিকার হয়েছে মাত্র ১০ বছরের এক শিশু মাদ্রাসাছাত্রী। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিশুটি মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২২ অক্টোবর বিকেলে শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় ঘটে এই নৃশংস ঘটনা। ওই ভবনে শিশুটিকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্ত শামীম প্রধান। পরে ২৩ অক্টোবর রাতে শিশুটির বাবা—যিনি পেশায় একজন রিকশাচালক—শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাটি আমলে নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০২০-এর ৯(১) ধারায় মামলা রুজু করেছে।
শিশুটির পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে শামীম প্রধান। এলাকার মানুষ তার ভয়ে মুখ খুলতে পারছিলেন না। তবে এই ঘটনার পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে শামীমের অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীত—যেখানে নারী নির্যাতন, যৌন কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে ছিনতাই পর্যন্ত সবই আছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, মাধখলায় অবস্থিত বাংলাদেশ তুলা গবেষণা কেন্দ্র এলাকায় প্রায়ই ঘুরতে আসা নারী-পুরুষদের হয়রানি করত শামীম ও তার অনুসারীরা। প্রেমিক যুগলদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। এলাকাবাসী জানান, শামীমের যৌন লালসার শিকার হয়েছেন তার আত্মীয়রাও—এমনকি একপর্যায়ে তার আপন ভাগ্নিকেও ছাড়েনি সে।
অভিযুক্তের একাধিক ঘনিষ্ঠ বন্ধুও স্বীকার করেছেন, ঘটনার পর থেকেই শামীম পলাতক। তার বাবা আব্দুল কাদির জানান, “ছোটখাটো ঘটনা আগেও ঘটেছে, আমি নিজেই সালিস করেছি। তবে এবার যদি সে সত্যিই এমন জঘন্য কাজ করে থাকে, আমি নিজেই তার শাস্তি দাবি করছি।” তবুও স্থানীয়দের অভিযোগ—পরিবারটি নেপথ্যে মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী বলেন, “শামীমের কারণে তুলা উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় কোনও নারীই নিরাপদ নয়। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি নেতাদের একজন জানান, শামীম নিজেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার বেপারীর “বিশ্বস্ত সহযোগী” পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে এসেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার বেপারী বলেন, “আমি সবসময়ই অপরাধের বিরুদ্ধে। শামীম আমার কর্মী হলেও যদি সে অপরাধী হয়, আইনের আওতায় তার বিচার হোক।”
এদিকে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বারিক জানান, “ধর্ষণের মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চলছে, তদন্তও শুরু হয়েছে।”
শ্রীপুরের মানুষ আজ ক্ষোভে ফুঁসছে। সবাই বলছে—রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এ ধরনের অপরাধীদের কঠোর শাস্তিই পারে সমাজে বার্তা দিতে। দশ বছরের এক শিশুর জীবনে কালো অধ্যায় রচনার দায় এড়াতে পারে না কেউই। এখন দেখার বিষয়, আইনের কাঠগড়ায় কবে হাজির হবে শামীম প্রধান—নাকি সে-ও হবে আরেক ‘অপরাধী, যাকে কেউ ছুঁতে পারে না’।