এনামুল হক আরিফ
ব্যুরো চিফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চাঞ্চল্যকর পিতা হত্যা মামলায় ছেলে জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম মিয়া (৪৩)-এর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট দুপুরে নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে পাট কাটা নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিহত লিল মিয়া (৭৫) ছিলেন ওই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।
সেদিন দুপুরে পাট কাটাকে কেন্দ্র করে পিতা লিল মিয়া ও ছেলে জসিম উদ্দিনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত জসিম ঘরে থাকা কাঠের ছিয়া (স্থানীয় ভাষায় “ছাহাইট”) হাতে নিয়ে তার বাবার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই লিল মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ আসামি জসিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে।তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারার্থে গ্রহণ করা হয় এবং ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২/৩২৩ ধারায় আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে।দীর্ঘদিন ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও প্রমাণ উপস্থাপন শেষে আদালত বুধবার রায় ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে বলেন,“আসামি জসিম উদ্দিন তার পিতা লিল মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার মাধ্যমে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত করেছে। সাক্ষ্য ও প্রমাণে তার অপরাধ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে।”ফলে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন খান রায় নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন,“আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাদীপক্ষ স্বস্তি পেয়েছে, যা সমাজে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুল হক রিটন বলেন,
“আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমাদের ক্লায়েন্ট নির্দোষ। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।”
এই রায় ঘোষণার পর নবীনগর ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, “পিতা হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে আসামি, এতে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আরও বেড়েছে।”সূত্র: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত, নবীনগর থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট মামলার নথি।