এনামুল হক আরিফ
ব্যুরো চিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ তিনজন সক্রিয় ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। সোমবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে মোগড়া ইউনিয়নের গঙ্গাসাগর দীঘির পাড় কাচারি সংলগ্ন রাস্তার উপর থেকে তাদের আটক করা হয়।এসময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করলেও অন্তত ১০ থেকে ১২ জন ডাকাত অন্ধকারের সুযোগে পালিয়ে যায়। আটককৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একাধিক দেশীয় অস্ত্র ও ডাকাতির সরঞ্জাম।
আখাউড়া থানা সূত্রে জানা যায়, রাত আনুমানিক তিনটার দিকে স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে গোপন সংবাদ আসে যে, গঙ্গাসাগর দীঘির পাড় এলাকায় একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর পেয়ে আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) নির্দেশে পুলিশের একটি চৌকস দল দ্রুত ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে।পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল পালানোর চেষ্টা করলে তিনজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। বাকিরা অন্ধকারের সুযোগে পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চল ও খালের দিক দিয়ে পালিয়ে যায়।অভিযানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে নিম্নলিখিত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন—
০২টি কাঠের হাতল বিশিষ্ট লম্বা ছুরি, ০১টি স্টিলের চিকন ফোল্ডিং ছুরি,
০১টি লম্বা স্টিলের পাইপ,
০১টি লম্বা বেতের লাঠি, এবং
০১টি লোহার তৈরি ভাঙচুরের যন্ত্র।
এই সব অস্ত্র ও সরঞ্জাম উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জব্দ করা হয়।গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের পরিচয়। ১ আকবর হোসেন জারু (৩০), পিতা—মৃত লাল মিয়া, সাং—বড় বাজার।
২। সোহান মিয়া (২৭), পিতা—মৃত মুরাদ, সাং—রাধানগর বনিকপাড়া।
৩। মোঃ মাহিন ভূইয়া (২৪), পিতা—মৃত শাহীন ভূইয়া, সাং—মোগড়া বাজার, থানা—আখাউড়া, জেলা—ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
পুলিশ জানায়, আটক তিনজনই স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত অপরাধী এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত দলটি সম্প্রতি আখাউড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক সংলগ্ন সড়ক এবং গ্রামীণ এলাকায় রাতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছিল। তারা নিয়মিত বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে পরিকল্পনা ও অস্ত্র মজুত করত।
পুলিশ ধারণা করছে, এই চক্রটি আখাউড়া, কসবা, বিজয়নগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোতেও সক্রিয় থাকতে পারে।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন,“গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে আমরা তিনজন ডাকাত সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করেছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। তাদের বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,“পালিয়ে যাওয়া ডাকাতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যাতে আর কেউ এই ধরনের অপরাধে জড়াতে না পারে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ পুলিশের তাৎক্ষণিক অভিযানের প্রশংসা করেছেন। তারা বলেন, সম্প্রতি এলাকায় অচেনা কিছু লোকজনের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। সময়মতো পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় কোনো অঘটন ঘটেনি।
মোগড়া ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানান,“রাতে টহল জোরদার থাকায় আমরা নিরাপদ বোধ করছি। পুলিশের এই দ্রুত পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছে।”আখাউড়া থানায় আটক তিনজনের বিরুদ্ধে “ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণ ও অস্ত্র রাখার” অভিযোগে নিয়মিত মামলা (ধারা ৩৯৯/৪০২ দণ্ডবিধি) রুজু করা হয়েছে।এছাড়া পলাতক অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করতে বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আখাউড়া থানার এই সফল অভিযান স্থানীয় এলাকায় পুলিশের দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ দিয়েছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে সম্ভাব্য বড় ডাকাতির ঘটনা প্রতিহত হয়েছে এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।