.jpg)
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি এস এম বাদল
জন্মদাতা পিতার নাম মুছে দিয়ে প্রতিবেশী এক মুক্তিযোদ্ধাকে পিতা বানিয়ে নকল সনদ তৈরি করে চাকুরি বাগিয়ে নেন সেনিলা খাতুন নামের এক প্রতারক। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কৃষি অফিসে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে কর্মরত আছেন। ২০০৬ সালে ৩০ অক্টোবর এই পদে যোগদান করেন তিনি। কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার দৌলতখালী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা খাতুন। তার পিতার নাম আজগর ল সরদার। সেলিনার বাবা আজগর সরদারের বাড়িও একই উপজেলার একই গ্রামে। নিজ পিতা আজগর আলীর পরিবর্তে কাগজ কলমে এখন তার পিতার নাম ফয়েজ উদ্দিন। ফয়েজ উদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বাড়িও একই এলাকায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে কাগজ কলমে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজ উদ্দিনকে পিতা দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরিপ্রাপ্ত হন সেলিনা খাতুন। তৎকালীন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সহযোগিতায় ফয়েজ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা সনদটি হাতিয়ে নেন সেলিনা খাতুন। এরপর অবিকল নকল আরেকটি সনদ তৈরি করে মূল সনদটি ফেরত দেওয়া হয় ঐ মুক্তিযোদ্ধাকে। ঐ নকল সনদটি দিয়ে সেলিনার বড় ভাসুর আব্দুল মালেকের
মাধ্যমে চাকুরি হাতিয়ে নেন তিনি। চেয়ারম্যান সনদ, চারিত্রিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র, এমনকি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশংসাপত্রেও পিতার নামের স্থানে মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে জাল সনদ তৈরি করা হয়। এই মালেক অবৈধ পন্থায় ভুয়া সনদের মাধ্যমে কয়েকশ মানুষকে কৃষি অধিদপ্তরে চাকুরি দিয়েছেন। মালেক কৃষি অধিদপ্তরের একটি বড় পদে চাকুরি করতেন। চাকুরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তবে তিনিও এখন চাকুরিচ্যুত অবস্থায় রয়েছেন। মালেকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া সেলিনার পরিবারের একাধিক নিকট আত্মীয় স্বজনও কৃষি অধিদপ্তরে চাকুরিরত রয়েছেন। তাদেরকেও অবৈধ পন্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ধারাবাহিকভাবে বিষয়াবলী তুলে ধরা হবে। প্রসঙ্গে বীর-মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজ উদ্দিনের
মুক্তিযোদ্ধাকে পিতা সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার সেলিনা নামে কোন কন্যা সন্তান নেই। আমার দুই ছেলে ও একটি মেয়ে। দুই ছেলের মধ্যে একজন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ও অন্যজন আর সড়ক ও জনপথ বিভাগে চাকুরী করেন। মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী করেন। বহুদিন আগে এলাকার এক ব্যক্তি আমার এক সন্তানকে চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার?
করেন। পরে আমি আমার সনদটি পুনরায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমার সনদে ভূয়া ভাবে চাকুরী করলে আমিও আইনি ব্যবস্থা নিবো। বিষয়টি নিয়ে কৃষি অফিসের ওয়েবসাইটে থাকা সেলিনা খাতুনের মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিয়ে কথা হলে তিনি রং নম্বর বলে জানান। এই বিষয়ে অভিযুক্ত সেলিনার বাবা আজগর আলী বলেন, সেলিনা বর্তমানে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছে। আমি কোন মুক্তিযোদ্ধা নই। তথ্যগোপনের বিষয়ে আমি তার কিছুই জানিনা। এব্যাপারে কথা ভেড়ামারা বলতে ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিসারদা মাহমুদা সুলতানার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই প্রসঙ্গে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমরা সকল ধরনের সহযোগিতা করবো।