বাদশা আলমগীর
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলমান জমি দখল–বিরোধ ও আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের নির্দেশে অবশেষে নিজ মালিকানাধীন জমির দখল ফিরে পেয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের দুই ভাই—মো. আব্দুল গফুর জোয়ার্দ্দার ও মো. হাসান আলী জোয়ার্দ্দার।
গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) আদালতের নির্দেশনায় নিযুক্ত কর্মকর্তা, ভূমি অফিসের মাঠকর্মী, সার্ভেয়ার ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মানচিত্র অনুযায়ী পরিমাপ শেষে দুই ভাইয়ের কাছে জমির দখল হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে চলমান বিরোধের অবসানে স্থানীয় জনগণের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে।
২০০৮ সালে এনায়েতপুর মৌজার সিএস ও এসএ রেকর্ডভুক্ত ৫৮ শতক জমি বিভিন্ন দাগ থেকে মনোয়ারা খাতুন নামে এক নারীর কাছ থেকে ক্রয় করেন দুই ভাই গফুর ও হাসান। জমি ক্রয়ের পর দলিল, নামজারি, খারিজ, রেকর্ড সংশোধনসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে—জমির বিক্রেতা মনোয়ারা খাতুনের দুই ভাই মো. রহিম শেখ ও মো. রশিদ শেখ শুরু থেকেই সন্ত্রাসী কায়দায় জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বাধা সৃষ্টি করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা, টানাপোড়েন ও বিরোধ দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে চলমান ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, রহিম ও রশিদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছিলেন।
দখল না পেয়ে প্রথমে পার্টিশন মামলা দায়ের করেন জমির ক্রেতা গফুর ও হাসান। দীর্ঘ শুনানি ও প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেন। তবে রায় অনুকূলে আসলেও তাতে জমির বাস্তব দখল মেলেনি।
পরে বাধ্য হয়ে দুই ভাই দখল পুনরুদ্ধার মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালত নির্দেশ দেন—সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সশরীরে জমি পরিমাপ করে প্রকৃত মালিকদের দখল বুঝিয়ে দিতে হবে।
নির্ধারিত দিনে জমি পরিমাপ শুরু হলে অভিযুক্ত পক্ষ রহিম শেখ ও রশিদ শেখ আপত্তি জানান এবং আদালতের নির্দেশ মানতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে জানা যায়। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের কোনো দাবি বা কাগজপত্র থাকলে তা আদালতে উপস্থাপন করুন। আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আইনগত মালিকের দখলে বাধা সৃষ্টি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং দখল হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছর জমির দখল না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন দুই ভাই। সামাজিকভাবেও নানা অপমান, কটূক্তি ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন বলে জানান তাঁরা।
দখল ফিরে পাওয়ার পর আবেগঘন কণ্ঠে তাঁরা বলেন,
“জমি কিনেছি আইনের পথে। তারপরও দখল নিতে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হলো। পরিবার নিয়ে ভীষণ কষ্টে ছিলাম। ভয়ভীতি, চাপ, মানহানি—সবই সহ্য করেছি। শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিয়েই জিতলাম। আইনই আমাদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছে।”
এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত স্বজন ও প্রতিবেশীদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এনায়েতপুর গ্রামের বহু বাসিন্দা জানান, এ জমিকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মাঝেমধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কাও দেখা দিত। তবে গফুর জোয়ারদার ও হাসান আলী জোয়ারদার তারা গ্যাঞ্জাম গোলযোগ পছন্দ করেনা, তাই তারা মারামারি হানাহানি করতে দেয়নি বরং রহিম ও রশিদ এরা দলবল নিয়ে এসে বারবার গ্যাঞ্জাম করার চেষ্টা করেছে।
একজন বয়োজ্যেষ্ঠ গ্রামবাসী বলেন, “এটা অনেক দিনের সমস্যা ছিল। অবশেষে আদালতের রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আইন ও ন্যায়ের বিজয় দেখলাম।
স্থানীয়দের মতে, এ ঘটনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এলাকায় জমি নিয়ে দখল–জবরদস্তি ও শক্তিপ্রদর্শনের প্রবণতা কমবে এবং আইনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।