প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:০৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গাজীপুরে বনের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে, নাটকীয় মামলা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে

মোহাম্মদ কাজল  

সংবাদ প্রকাশের জেরে,এক সাংবাদিকের নামে গাজীপুর বন কোর্টে ‘হাস্যকর মিথ্যা নাটকীয়  মামলা’ দায়ের করলেন বন বিভাগ কতৃপক্ষ। তবে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করায় গাজীপুরে কর্মরত সাংবাদিক সমাজে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ঢাকা বন বিভাগের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের বিট কর্মকর্তা কে.বি.এম. ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে দৈনিক ভোরের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও গাজীপুরের স্থানীয় সাংবাদিক বিপুল বৈরাগীকে।
বনবিভাগের এজাহারে দাবি করা হয়— ওইদিন সকাল ৭টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস ও তার সহকর্মীরা আতলোড়া মৌজার সংরক্ষিত বনে অভিযান চালান। সেখানে বিপুল বৈরাগী ও তার সহযোগীরা গজারী গাছ কাটছিলেন, ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে গজারী কাঠ, দা, করাত ও কুড়ালসহ আলামত জব্দ করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্থানীয় সূত্র ও প্রমাণাদিতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল সাংবাদিক বিপুল বৈরাগীর বাসা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে, এবং ঘটনার সময় তিনি ছিলেন নিজ বাসায় । তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগে এমন বহু অসঙ্গতি রয়েছে যা মামলাটিকে প্রতিশোধমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ করে। বিপুল বৈরাগী গত কয়েক মাস ধরে রাজেন্দ্রপুর বিটে অবৈধ দখলবাণিজ্য, দোকান বসানো ও বনভূমি বিক্রির সিন্ডিকেট নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এসব সংবাদের পর থেকেই বিট কর্মকর্তা ফেরদৌসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান— এমন অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এক অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, সাংবাদিক বিপুল ফেরদৌসকে জিজ্ঞেস করছেন— 'আপনার এলাকায় দোকান বসানো, টাকা নিয়ে জমি দেওয়া— এসব অভিযোগ কি সত্য?' উত্তরে ফেরদৌস বলেন, না, এগুলো ভিত্তিহীন। পরবর্তী আরেক কল রেকর্ডে ফেরদৌস নিজেই বিপুল বৈরাগিকে অফিসে এসে পরিচিত হয়ে এক কাপ চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
এই রেকর্ড থেকেই স্পষ্ট, উভয়ের মধ্যে কথোপকথন বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল, কোনো সংঘর্ষ বা বন অপরাধে সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত নেই। অন্যদিকে, রাজেন্দ্রপুর বিট এলাকার বনের পাশে দোকান বসানো এক ব্যক্তি ভিডিওতে বলেন, বনবিভাগের লোকজন প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে দোকানপ্রতি ১৫০ টাকা করে নেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সংরক্ষিত বনের জমি দখল ও বাজার গড়ে তোলা ব্যাপক হারে বেড়েছে। রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা অফিসের আশপাশে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বয়স্ক ব্যাক্তি জানান, বনের জায়গায় কাঠাপ্রতি কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে ফরেষ্ট অফিসার পজিশন বিক্রি করে থাকে, তবে লোক বুঝে অর্থের পরিমান কমবেশি হয়ে। শরাফত আলী, জজ মিয়া, মাসুম, ফাহিম, রিয়াজ, শাহিন, আরিফ ও আলী হোসেনসহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি সংরক্ষিত বনের সিএস ১৭৭ দাগে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
দুই দফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কোনো আলামত জব্দ করা হয়নি, বরং অভিযানের কিছুদিন পরই দখলদাররা পুনরায় দোকান তৈরি করেন— অভিযোগ স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর। এ বিষয় 
গাজীপুর পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ফেডরিক মুকুল বিশ্বাস বলেন, বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস ঠান্ডা মাথায় বন ধ্বংস করছেন। গাজীপুর পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ফেডরিক মুকুল বিশ্বাস বলেন, ইতিপূর্বে আমি রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের বনভূমি বেহাত হওয়ার অনেক খবর পেয়েছি। আমি আমার মোবাইল ফোনে বিট অফিসার ফেরদৌসকে অনেকবার অনেক খবর জানিয়েছিলাম। বিভিন্ন অনিয়মের খবর শোনার পর বিট অফিসার ফেরদৌস একদিন আমার বাড়ি পাশে  এসেছিলেন। তিনি বনভূমি রক্ষায় অনিয়মের সাথে   জড়িত ছিলেন বলেই তিনি আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য বা আমাকে খুশি করার চেষ্টা করেছিলেন। আমাকে সামলাতে না পেরে তিনি কালো মুখ করে ফিরে গেছেন।
বিট অফিসার ফেরদৌস সাংবাদিক বিপুলের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন গাজীপুর মহানগর শাখার নির্বাচন উপলক্ষে সাংবাদিক বিপুল ১৩ তারিখ সন্ধ্যা থেকে ১৫ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত, আমার নির্দেশে, তিনি নির্বাচনের সার্বিক ব্যবস্থা, স্থান প্রস্তুতকরণ এবং প্রায় ৫০টি গির্জার প্রতিনিধিদের জন্য খাবারের বাজার এবং অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সাজসজ্জার ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি নির্বাচনে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন।
সাংবাদিক বিপুল বৈরাগী বলেন, আমি বনবিভাগের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ করেছি। ম্যানেজ করতে না পারায় তারা আমার নামে এই হাস্যকর মামলাটি দিয়েছে। সকাল সাতটায় আমি নিজ বাড়িতে ছিলাম— অথচ তারা বলছে আমি বনের গাছ কাটছিলাম! এ ধরনের সাজানো মামলা সাংবাদিকতা ও বাকস্বাধীনতার উপর নগ্ন আঘাত।
তবে এসব বিষয়ে রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের বিট কর্মকর্তা কে.বি.এম ফেরদৌসকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক (কেন্দ্রীয় অঞ্চল) এ. এস. এম. জহির উদ্দিন আকন বলেছেন, মামলা হওয়ার পরে বিষয়টি জেনেছি। আপনি বিষয়টি সম্পর্কে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়