হাফিজুর রহমান গাজীপুর
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ২৫নং মূলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেন চলছে অনিয়মের মহোৎসব! অভিযোগের তীর উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর আক্তার বেগমের দিকে। স্থানীয়দের দাবি— ভর্তি ফরম থেকে শুরু করে পরীক্ষা ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি এমনকি ছাড়পত্র (টিসি) পর্যন্ত— সব কিছুতেই চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের খেলা। সরকার নির্ধারিত ফি’র তোয়াক্কা না করে নিজস্ব ‘নিয়মে’ চলছে অর্থ উত্তোলন, আর সেই টাকাই নাকি যাচ্ছে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত তহবিলে!
সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে কালীগঞ্জের মূলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শুরু হয় এই পাঠদান কার্যক্রম। কিন্তু এখানেই শুরু হয় অনিয়মের ছড়াছড়ি। অভিযোগ আছে— নূর আক্তার বেগম ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফরম বাবদ ১০০ টাকা, পরীক্ষা ফি ৩০০ টাকা, রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০ টাকা এবং ছাড়পত্র বাবদ ২০০ টাকা করে নিচ্ছেন। অথচ সরকারি নির্ধারিত ফি এর চেয়ে এসব আদায় বহুগুণ বেশি!
রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়েই সম্প্রতি ফেটে পড়ে ক্ষোভের আগুন। সরকারি ফি যেখানে মাত্র ১৮৩ টাকা, সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৫০০ টাকা! ফলে শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। হিসাব কষে দেখা গেছে— শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদই ৩৫০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ দশ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছেন প্রধান শিক্ষক। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন— বিদ্যালয়ের ন্যূনতম খরচ চালিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করছেন নূর আক্তার বেগম। এমনকি সরকারি বরাদ্দের টাকাও নাকি তিনি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যয় করছেন!
অভিযোগের বিষয়ে মুখোমুখি হলে প্রধান শিক্ষক নূর আক্তার বেগম নিজেই স্বীকার করেন যে তিনি ভর্তি ফরম, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা ও ছাড়পত্র বাবদ যথাক্রমে ১০০, ৫০০, ৩০০ ও ২০০ টাকা করে নিয়েছেন। তবে কেন সরকার নির্ধারিত ফি’র বেশি নিয়েছেন— সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি নীরব থাকেন।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরন্নাহার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি জানান— “২৫নং মূলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে এটিও মনিরা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”