প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে অবৈধ দখল ও ভূয়া দলিল বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

হানিফ রানা - ক্রাইম রিপোর্টার

সোনাইমুড়ী রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটি ও মসজিদের মুসুল্লিরা মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে মসজিদের সম্পত্তি অনিয়ম ও ভূয়া দলিলের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ করে তা বাতিলের জোর দাবি করেন। তারা জানান, মসজিদের আঙ্গিনায় বসে অবস্থান নেয়া দল ও ভূমিভোগীরা দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের দখল করে বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে দখলদারি চালিয়ে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দলিল অনুযায়ী সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৮৭ নং সাবেক নাওতলা মৌজা, বর্তমান ২৮৮ নং নাওতলা মৌজার সাবেক দাগ ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ (বর্তমান দাগ ১০০৯, ১০১০) মোট সাড়ে ৬১ শতাংশ জমি নোটারি পাবলিক কর্তৃক নথিভুক্ত হয়। এ চার দাগের মধ্যে ৩০ শতাংশ অংশ মসজিদের সাফ কবলা সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় এসব সম্পত্তি মসজিদের মৌলিক অধিকারভুক্ত, যা কোনোভাবেই ব্যক্তিগত দখলে থাকা উচিৎ নয়।

মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা মখলেসুর রহমান সম্পর্কে বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৫৬ সালে তিনি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। চাটখিল কামালপুর নিবাসী এই আলেম ছিলেন রাজনৈতিক ও শিক্ষা-সেবার একজন সুপরিচিত নাম; ঢাকাগামী ট্রেনে সোনাইমুড়ী স্টেশনে অবতরণকালে তিনি মসজিদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন। পরে নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ক্রয় করে তিনি মসজিদের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি দাগ ও পানিধারা তৈরি করেন এবং স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষদের দান-অনুদানে মসজিদটি নির্মিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতার জীবিতকালেই মসজিদের পাশে পুকুর খনন করা হয়—সম্প্রতি প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে শতশত লোক সেখানে ওজু ও গোসল করে আসছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের চারপাশে নানা অসাধু ব্যক্তি ও জমিখেকোদের কু-চেষ্টা বাড়তে থাকে; বিশেষত প্রতিস্থাতা মাওলানার মৃত্যুর পর দখলবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় বলে কমিটি অভিযোগ করে।

প্রতিষ্ঠাতার একমাত্র পুত্র শেখ জাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ চলে। একপর্যায়ে মসজিদ কমিটি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সাড়ে ৬১ শতক জমি ওয়াকফ করে দেয়; তখন তারা বিশ্বাস করেন—ওয়াকফ হওয়া সম্পদ কখনোই ওয়ারিশদের কাছে নিয়ে যায়নি। তথাপি পরবর্তীতে কিছু দুর্বৃত্ত নেমে আসা কৌশলে নামমাত্র মূল্য দিয়ে ভুয়া দলিল তৈরি করে মসজিদের জমি কেটে নিয়ে যায় এবং পুকুরসহ বিভিন্ন অংশ দখল করে ফেলে।

দখলদাররা কেবল জমি দখলই করেনি, অভিযোগ অনুযায়ী মসজিদের পুকুর থেকে মাছ সংগ্রহ করে বিক্রি ও পুকুরটি মাটি ভরাট করে দিয়ে মুসল্লিদের ওজু-গোসলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। কমিটির সদস্যরা যারা বাধা দিতে গেলে তাদের মারধর ও অশ্লীল ভাষায় হুমকি দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেই মসজিদ সংস্কারের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি—কারণ দখল মুক্ত না হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সৃজনকৃত ভূয়া দলিল বাতিল ও মসজিদভুক্ত সম্পত্তি উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, মসজিদ ও হাকিম-হুকুমা যাতে আইনসম্মতভাবে রক্ষিত থাকে এবং মুসল্লিদের পূণবিস্তার—ওজু ও নামাজ আদায়ের স্বাচ্ছন্দ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায় সে জন্য তারা কঠোর নীতিতে এগোতে বাধ্য হচ্ছেন।

শেষে পেশাজীবী ও সমাজিক নেতা-মেম্বারদের নেতৃত্বে পরিচালনা কমিটি আশ্বস্ত করেন, তারা আইনী পথে এবং গণসংযোগের মাধ্যমে এই অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে যাবেন। ভুয়া দলিল রদ করে মসজিদের বাস্তব সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মসজিদের কমিটি ও মুসল্লিরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়