প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২৫, ০৭:৫০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুস্থ্য সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি অনুদান বিতরণ ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক

এনামুল হক আরিফ 
ব্যাুরো চিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা

দুস্থ্য সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি অনুদান বিতরণ ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারণ, ‘অস্বচ্ছল’ পরিচয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে এই অনুদান নিয়েছেন এমন অনেকেই বাস্তবে আর্থিকভাবে সচ্ছল। 
মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় জেলার ২১ জন সাংবাদিকের মাঝে মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক সত্যিকারের অস্বচ্ছল হলেও বাকিদের অনেকেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বিটিভি থেকে চাকরিচ্যুত মোহাম্মদ আরজু ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার কর্মকর্তা। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে নানান উপায়ে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন৷ 

চেক পাওয়াদের মধ্যে মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আ ফ ম কাউসার এমরান শহরের পৈরতলায় তিন তালা বাড়ির মালিক। তিনি পারিবারিকভাবে বিত্ত বৈভবের মালিক। তার পরিবারের সদস্যরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বলে জানা গেছে।

দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি খ আ ম রশিদুল ইসলাম একজন রেজিস্টার্ড কাজী। প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করেন তিনি বিভিন্ন ভাবে৷ তার ছেলে ছাত্রলীগের ক্যাডার। বর্তমানে বিদেশে থেকে বাবার জন্য নিয়মিত অর্থও পাঠান। জানা যায় তিনি একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক।

অভিজাত ভবনে ভাড়া থাকেন ছাত্রলীগ নেতা, এশিয়ান টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান পারভেজ। তার স্ত্রী আওয়ামী লীগের মন্ত্রী রবিউলের প্রতিষ্ঠা করা স্কুলের শিক্ষিকা। এবং রবিউলের স্ত্রী ফাহিমা খাতুনের ঘনিষ্ঠ সহচর৷ পারভেজ প্রতিমাসে নানান সোর্স থেকে লাখ টাকা আয় করেন। 

১৫ বছর ধরে কম্পিউটার ব্যবসা করছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন বেলাল। তার একাধিক সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে বলে জানা যায়৷ সেগুলো থেকে তিনি দৈনিক আয় করেন।

এখন টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয় এর বাবা প্রবাসে থেকে অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন৷ উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পদের মালিক৷ সেই সঙ্গে নানান ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত৷ কথিত আছে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। 

আরটিভির জেলা প্রতিনিধি আজিজুর রহমান পায়েল, দৈনিক দেশ কালের আখাউড়া প্রতিনিধি আশিষ সাহা এবং দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি শ্যামা প্রসাদ সাহাও স্বচ্ছতার সঙ্গে দিনাতিপাত করেন। এরাও মিথ্যে তথ্য দিয়ে এই অনুদান হাতিয়ে নিয়েছেন। 

যদিও অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন প্রকৃতই অসুস্থতা, বেকারত্ব বা পারিবারিক কষ্টের মধ্যে আছেন, তবে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীদের আর্থিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের দায়িত্ব জেলা তথ্য কর্মকর্তার। তবে এবারের ঘটনায় সেই যাচাই-বাছাই আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।

"যদি সঠিকভাবে যাচাই করা হতো, তাহলে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরা কখনোই এই তালিকায় থাকতেন না," বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সিনিয়র সাংবাদিক। "সরকার কি কোনো যাচাই ছাড়াই রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা বিলিয়ে দিচ্ছে?”- এমন প্রশ্ন রাখছেন অনেকেই৷ 

এই ঘটনার জেরে জেলার সাংবাদিক মহলে অসন্তোষ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

এতে আরো দায়ি করা হচ্ছে আওয়ামী মহিলা লীগের পলাতক নেত্রী তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাতের স্বামী প্রেসক্লাব সভাপতি বিজনকে৷ সে সবকিছু জেনেও মুখে কুলুপ এঁটে অনুষ্ঠান মঞ্চে বসে বসে মজা দেখেছে৷ 

সচ্ছল সাংবাদিকেরা নিজেদেরকে 'অসচ্ছল' পরিচয় দিয়ে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে প্রকৃত অসচ্ছলদের সরকারি এই অনুদান তছরুপ করতে সাহায্য করেছে বিজন-বাহার গং৷
.

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়