হেলিকপ্টার করে সহকারি প্রধান শিক্ষক’কে বিদায় সংবর্ধনা
শাহ সাহিদ উদ্দিন,কুমিল্লা রিপোর্টার
বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষের টান টান উত্তেজনা উভয় পক্ষই একাধিক অভিযোগপত্র জমাদেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে।
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন আব্দুল্লাহপুর হাজ্বী আমীর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে এলাকায় পক্ষে- বিপক্ষের টান টান উত্তেজনা। সংঘাত এড়াতে আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) দু’পক্ষকে নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের জরুরী বৈঠক।
রোববার (১৫ অক্টোবর) হাজী আমির উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদ এর শেষ কর্মদিবসে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. জাকির হোসেন মোল্লা, ইউনিয়ন সদস্য আনিসুর রহমানসহ কমিটির একাংশ। তাদের ঘোষণা যে কোন মূল্যে অপ-শক্তির সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করা হবে।অপরদিকে, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সরকার, সাবেক ইউনিয়ন সদস্য জুলহাস সরকারসহ পরিচালনা পর্ষদের অপরাংশের ঘোষণা কোনভাবেই সংবর্ধনা হতে দেয়া যাবেনা। এমনকি শিক্ষককে বহন করা হেলিকপ্টার বিদ্যালয়ে নামতে দেয়া হবেনা। তারা রোববার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
উভয় পক্ষই সংবর্ধনা করার পক্ষে এবং বি-পক্ষে একাধিক অভিযোগপত্র জমাদেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে। সংবর্ধনার আয়োজন করার পক্ষে এবং সংবর্ধনা বন্ধের পক্ষের আবেদন পত্রে অর্থাৎ দু’পক্ষের আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সরকার। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় প্রশাসনও বিব্রত হয়ে পড়েন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক- শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসী ৩০ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়ানো একজন মানুষ গড়ার কারিগড়কে তার শেষ কর্মদিবসে ব্যতিক্রমী আয়োজনে সম্মাননা দেখাতেই এ আয়োজন করেছি। বিদায়ী সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদকে আমরা নিজ খরচে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টরে নিয়ে আসব বিদ্যালয়ের আঙ্গীনায়। তাকে সংবর্ধনা দিতে পেছনে থাকবে শতাধিক গাড়িবহরের একটি বর্নাঢ্য র্যালী আর করুণসূরের বাদক দল। এ জাকজমক অনুষ্ঠানে বাঁধ সাদলেন একটি অশুভ চক্র। আমরা সকল বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে সংবর্ধনা অব্যাহত রাখব। ইতিমধ্যে মঞ্চ, প্যান্ডেল তৈরীসহ সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিপক্ষে আন্দোলনরত নেতারা জানান, একজন দূর্নীতিবাজ শিক্ষক যিনি শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানী, গত বছরের অবিতরণকৃত বই ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা এবং তার নেতৃত্বে প্রধান শিক্ষককে চর থাপ্পর মারা, গত ১৫ মে’ এক সভায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনকে অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা, যার ফলে শিক্ষক- কর্মচারিরা এ ক’মাস ধরে বেসরকারী বেতন ভাতাদী থেকে বঞ্চিত থেকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এমন একজন শিক্ষককে এতো ব্যয়বহুল জমকালো মর্যাদায় বিদায় সংবর্ধনা দেয়া মানেই আদর্শ শিক্ষকদের ছোট করা।এ ব্যপারে দেবীদ্বার আব্দুল্লাহপুর হাজী আমীর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. জাকির হোসেন মোল্লা জানান, আমরা একজন শিক্ষককে সংবর্ধনা দেব, এটা তার পাওনা সম্মাননা। এতে প্রতিপক্ষের হিংসার কারন, পূর্বের বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অনেক অনিয়ম করেছে। সেগুলোর মধ্যে বিদ্যালয়ের নামে ৬০ শতাংশ পুকুর ৩ লক্ষ টাকার স্থলে ২০ হাজার টাকায় ইজারা প্রদান, বিদ্যালয়ের ওয়াকফকৃত জমি থেকে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫ শতাংশ জমি ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগসহ নানা অভিযোগে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনকে গত ১৫ মে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শতবর্ষি উক্ত বিদ্যালয়ে অতীতে কোন যোগ্য সৎ লোক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এদের মধ্যে মুক্তি হসপিটাল ও মুক্তি মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস আখন্দ, সাবরেজিষ্টার আব্দুল করিম সরকার, বিশিষ্ট সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানও সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এ ব্যপারে শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাত সোয়া ৭টায় দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমলকৃষ্ণ ধর জানান, আজ বিকেলে ইউএনও মহোদয়ের উপস্থিতিতে ওনার কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে সংঘাত এড়িয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার কথা বলে মিলিয়ে দিয়েছি। ৩০ বছর যে বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষাগতা করেছেন, তাকে সংবর্ধনা দেয়া দোষের কিছু নয়। তবে বিদায় সংবর্ধনা হবে ভাবগম্ভীর পরিবেশে আর এখানে হেলিকপ্টারে এসে আনন্দঘন পরিবেশে একজন শিক্ষক বিদায় নেবেন, এটা শোভনীয় নয়। তাই হেলিকপ্টার, গাড়িবহবর ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করার অনুরোধ করেছি। বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে উভয় পক্ষের নেতাদের সমন্বয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে মিলিয়ে দিয়েছি।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা রাত সাড়ে ৭টায় কালের কন্ঠকে জানান, এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা না বলে কোন মন্তব্য দিতে পারবোনা।