বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

হাতিয়ায় অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, সংকটে সূর্যমুখী মার্টিন খাল

Logo
Desk Report 2 রবিবার, ০৮ ২০২৪, ৮:৪২ অপরাহ্ণ

মোজাহের ইসমাইল নাঈম.
ব্যুরো চীফ নোয়াখালী:

এক সময়ের চিরযৌবনা,খরস্রোতা ও ব্যস্ততম সূর্যমুখী খাল এখন যৌবন হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে। যেখানে বছরের অধিকাংশ সময়ই পানিতে ভরপুর থাকতো খালটি। মাল বোঝাই বড় বড় ট্রলার, নৌকা চলত যে খালে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ব্রিজ, দুই তীর দখল করে বসতি স্থাপন, দোকানঘর নির্মাণ ও পলিমাটি জমে ভরাট হওয়াসহ নানা কারণে এখন তা মৃতপ্রায়। এর মধ্যভাগের সঙ্গে যুক্ত মার্টিন খালটিও একই কারণে প্রাণহীন প্রায়

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করা সূর্যমুখী খালটি বিশ বাইশ বছর আগেও ছিল খুবই ব্যস্ততম। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নৌ-যাতায়াতের এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল এটি। সূর্যমুখী খালের দুই পাশে ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস। কালের পরিক্রমায় প্রবল সেই স্রোতস্বিনী খালটি সময়ের সঙ্গে এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। শীত মৌসুমে প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে খালটি।

সুপ্রাচীন সূর্যমুখী খাল তীরবর্তী তেমাতা, চৌমুহনী, কাজীর বাজার, সূর্যমুখী ও চরচেঙ্গা ঘাটে গড়ে ওঠা সেই ব্যবসা-বাণিজ্য এখন আর চোখে পড়ে না। সে সময়কার পেশাজীবীরা তাদের পেশা পরিবর্তন করে বাধ্য হয়েছে নানান পেশায় যুক্ত হতে।

 

এদিকে সূর্যমুখী খাল ও এর মধ্যভাগের সঙ্গে যুক্ত মার্টিন খালটি খননের তথ্য সূত্র খুঁজে এবং হাতিয়ার ভূচিত্র সম্পর্কে জ্ঞাতব্য মো. গোলম ফারুক ও আবুল হাসেমসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৪০ এর দিকে বুড়িরচর এলাকার প্রয়াত মোবারক আলী সারেং ব্রিটিশ কর্মকর্তা তথা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার জনৈক মার্টিনকে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার চিত্র দেখাতে আনেন। সরেজমিনে এসে তিনি জলজটে কৃষি ও মানুষের দুর্দশা দেখে নিজ উদ্যোগে খাল খনন শুরু করেন। তার নামানুসারে সন্দ্বীয়া ফাঁড়ি (উপজেলার ছৈয়দিয়া) থেকে দক্ষিণে মার্টিন স্লুইস হয়ে নদী পর্যন্ত খালটিকে বলা হয় মার্টিন খাল। যা ১৯৬৫-৭০ সালের জরিপে বুড়িরচর মৌজায় দিয়ারা রেকর্ড পায়।

একই সময়ে খনন হয় সন্দ্বীয়া ফাঁড়ি থেকে আফাজিয়া বাজার পর্যন্ত খালটিও। যা নয়নজলি/ কাটাখালি-বাঁধের গোড়া খাল নামে পরিচিত। এটি প্রথমে ১৯২২ সালে ডিএস জরিপ এবং পরে পিএস ১৯৩৫ সালের জরিপে চর ঈশ্বর রায় মৌজায় রেকর্ড পায়। এই মার্টিন ও নয়নজলি/ কাটাখালি-বাঁধের গোড়া খাল সংশ্লিষ্ট প্রধান সড়কটি তখন ডিসি (জেলা পরিষদের) রোড নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় আসে।

ADVERTISEMENT

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রাচীন জলধারা সূর্যমুখী ও নয়নজলি/কাটাখালি-বাঁধের গোড়া খাল ছাড়াও সাগুরিয়ার দোনা, কাটাখালি, বুড়ির দোনা, বগুলার দোনা, চরলটিয়া খালসহ গ্রামীণ প্রবহমান প্রায় খাল এখন দখলবাজদের কবলে। লোকজন তাদের জমিজমা কিংবা বাড়ির সামনে ইচ্ছেমতো সরু পোল, বক্স-কালবার্ট তৈরি ও দোকানঘর নির্মাণ করে একদিকে যেমন জলধারা সংকুচিত করে দিচ্ছে অপরদিকে পলিমাটি জমে বাকিটা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ওছখালী, খাসের হাট এলাকা, চৌমুহনী, আজিজিয়া ও সাগুরিয়া বাজার এলাকা উল্লেখযোগ্য। এতে কৃষি, মৎস্যসহ সর্বক্ষেত্রে ক্রমেই বিপত্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ওছখালী এলাকার আবুল হাসেম জানান, সূর্যমুখী খাল হয়ে নৌকা ও ছোট-বড় সম্মান নৌকা মালামাল নিয়ে মার্টিন খাল দিয়ে ওছখালী এলাকায় আসতো। প্রধান সড়ক থেকে পূর্ব দিকে এই খালের প্রশস্ততা ছিল ৪০ ফুট। লোকজন এখন খালের ওপর ঘরবাড়ি ও দোকানপাট তুলে সব দখল করে ফেলছে।

সাগুরিয়া এলাকার মো. গোলাম ফারুক জানান, এই এলাকার কৃষি উন্নতি এবং মানুষের কল্যাণে এই মার্টিন খাল খনন হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে খালটি সংকুচিত হয়ে গেছে।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী খবির উদ্দিন বলেন, একসময় সূর্যমুখী খালের পশ্চিম মুখ দিয়ে মেঘনা হয়ে ঢাকা-চাঁদপুর থেকে মালবাহী ট্রলার ঢুকতো। এবং পূর্বমুখ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে মেঘনার মোহনা হয়ে বড় বড় মালবাহী ট্রলার ঢুকতো। কিন্তু অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সূর্যমুখী বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন জানান, হাতিয়ার এই প্রধান খালটিতে পানির চাপ না থাকায় সহজে খালটি পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। একই এলাকার হারুন মাঝি জানান, ট্রলার চলাচলে এই খাল একসময় খুব রমরমা ছিল। এখন সব অতীত হয়ে গেছে।

সূর্যমুখী খাল সংলগ্ন তেমাতা এলাকার দিনমজুর আব্দুল বাতেন বলেন, খালের ওপর এই ব্রিজটি খুব নিচু হয়ে গেছে, যার কারণে ছোট চমন নৌকাও পার হতে পারে না

এসব ব্যক্তিরা জানান, সূর্যমুখী খালের ওপর অপরিকল্পিত ব্রিজ অপসারণ, মার্টিন খালসহ অন্যান্য খালের ওপর নির্মিত বাড়িঘর, দোকানপাট এবং ছোট ছোট পোল, বক্সকালবার্ট উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের পরিকল্পিত নির্দেশনামাপিক এসব গঠিত হলে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে। একই সঙ্গে সময়ে সময়ে খালসমূহের সংস্কার ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নাব্যতা ফেরানো সহজ বলে মনে করেন তারা। এক্ষেত্রে জনমানুষের সচেতনতা এবং আন্তরিক মনোভাবেরও বেশি প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তারা।

সুপ্রাচীন সূর্যমুখী খালটির নাব্যতা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, একসময়ের খরস্রোতা সূর্যমুখী খালের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা আছে। খালটি ড্রেজিং এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ব্রিজ-বসতি অপসারণে আমাদের ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মার্টিন ও নয়নজলি/ কাটাখালি-বাঁধের গোড়া খালটি দখলবাজদের কবল থেকে উদ্ধার সংক্রান্তে সওজ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান স্থানীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ আব্দুল ছাত্তার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবগঠিত এডহক কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোর প্রতিবাদে …

মহিউদ্দীন মাসুমঃ চৌদ্দগ্রামের বাতিসায় সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার দুপুরে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাতিসা বাজারের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট …

দেলোয়ার হোসেন রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকা থেকে ৪২ কেজি গাঁজা ও ১২০ বোতল ফেনসিডিলসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) …

ইউসুফ আলী নাটোর প্রতিনিধি: মেলা হলো মানুষের এক আনন্দ সম্মিলন। আর পৌষমেলা হলো শীতে হাজার বছরের বাঙালির ভূমি থেকে উৎসারিত নবান্ন উৎসবের …