মো:নুর ইসলাম সবুজ
লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবার মান, খাবার, পরিবেশসহ নানা সংকটে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক হাসপাতালে সিন্ডিকেট করে নিজেদের মতো চালাচ্ছেন যাবতীয় কার্যক্রম। এর মধ্যে অন্যতম হলেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আনোয়ারুল হক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি ব্যক্তিগত ক্লিনিক খুলে রোগীদের কৌশলে সেখানে চিকিৎসা নিতে প্রভাবিত করছেন। এতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুই লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয় হাতিবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়ম।
বহির্বিভাগে শত শত মানুষ অপেক্ষা করছে ডাক্তার দেখানোর জন্য। অন্তবিভাগেও ভর্তি রয়েছেন ৪০-৫০ জন রোগী। অনেকেই আসছেন, ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় কথা হয় সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে। তাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসকদের তেমন তৎপরতা নেই এখানে। ঠিকমতো সেবা না পাওয়ার নানা অভিযোগ তাদের। এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতালের খাবার সরবরাহসহ সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখনো সেই সিন্ডিকেট পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
অন্যদিকে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আনোয়ারুল হক নিজের মায়ের নামে গড়ে তুলেছেন চিকিৎসা সিন্ডিকেট। সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে হাতীবান্ধার দইখাওয়া মোড়ে বহুতল ভবনে গড়ে তুলেছেন ‘আলেয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্টিফিকেটসহ কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়েই চলছে এর কার্যক্রম। নিজের স্ত্রী ডা. মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস জেবিনসহ ওই ক্লিনিকে রোগী দেখেন ডা. আনোয়ারুল। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের তার ক্লিনিক থেকে সব ধরনের টেস্টের জন্য পাঠান তিনি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাবে রয়েছে ১৭ ধরনের টেস্টের ব্যবস্থা, যা অনেকেরই অজানা। তবে বিশেষ ছাড়ের কথা বলে ডা. মো. আনোয়ারুল হক তার নিজের ডায়াগনস্টিকে পাঠান বলে সেখানেই ছুটছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাতিবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনিশিয়ান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রক্ত, প্রস্রাব, ডেঙ্গুসহ ১৭ ধরনের টেস্টের সুবিধা আছে সেখানে। প্রতিদিন অন্তত দুই-তিনজন রোগী টেস্টের জন্য আসেন। কোনো কোনো দিন কাউকেও পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ থাকা সত্ত্বেও টেস্টের হার কম, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘জানেন না’ বলে জানান।
চিকিৎসাধীন এক নারীর অভিযোগ, ভর্তি হওয়ার পর বাইরে থেকে দুই হাজার টাকার টেস্ট করাতে বলা হয়েছে। গরিব মানুষ হওয়ায় সেই টেস্ট করা সম্ভব হয়নি তার। এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেস্ট হয় সেটাও তার জানা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমপি মোতাহার হোসেন ও আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর নির্দেশে সিন্ডিকেট চালিয়ে আসছিলেন, যা এখনো অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ওই ক্লিনিক তার মামার। তার কোনো মালিকানা নেই। তবে তিনি সেখানে বসেন। তার মালিকানার যথাযথ প্রমাণ দিলেও তিনি এ ব্যাপারে উত্তর দিতে পারেননি। অনুমোদন না নিয়েই কেন ক্লিনিক চলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। হাসপাতালে সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে টেস্ট করানোর সুযোগ থাকলে তা কেন হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাতিবান্ধার আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আনোয়ারুল হক অনুমোদন না নিয়েই ক্লিনিক চালাচ্ছেন, সেটা আমি শুনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’