মো:নুর ইসলাম সবুজ
লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটে সরকারি স্কুলে সংযুক্ত (বিএমটি) শাখার শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারিকরণের দাবীতে- সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের বালাটারীস্থ লালমনিরহাট টেলিভিশন জর্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের হলরুমে হাতীবান্ধা এস এস সরকারি মডেল হাই স্কুল এন্ড টেকনিক্যাল কলেজ এর সরকারি সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন হাতীবান্ধা এস এস সরকারি মডেল হাই স্কুল এন্ড টেকনিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ্ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। এ সময় হাতীবান্ধা এস এস সরকারি মডেল হাই স্কুল এন্ড টেকনিক্যাল কলেজের মোঃ সফিকুল ইসলাম, মোঃ হাসানুজ্জামান, মোঃ মাহাবুবর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ আবু কোরাইশ, দীনবন্ধু রায়, অনুকুল সাঁজোয়াল, মোঃ আঃ হাকিম, মোঃ রমজান আলী, অশোক কুমার রায়, কে, এম তবারক হোসেনসহ লালমনিরহাটের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাতীবান্ধা এস এস সরকারি মডেল হাই স্কুল এন্ড টেকনিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ্ জাহাঙ্গীর আলম লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, প্রথমেই স্মরণ করছি সেই সব শহীদদের যাদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছি এবং ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট মহান বিপ্লবে যেনারা শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে রক্তাক্ত জুলাই এ ছাত্র-জনতার মহান বিপ্লবে যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইগণ, লালমনিরহাট জেলাধীন হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত “হাতীবান্ধা এস এস সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড টেকনিক্যাল কলেজ” টি ১৯৪৬ সালে স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০০ সালে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং ২০০২ সালে এইচএসসি (বিএম) শাখাটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হয় এবং মে/২০০৪ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। মূল প্রতিষ্ঠানের কোড নম্বর ৭৩৫০ এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং এইচএসসি (বিএম) শাখার কোড নম্বর ১৫০১০। প্রতিষ্ঠানটির EIIN নম্বর 122773। প্রতিষ্ঠানটি গত ১০/০৭/২০১৬খ্রি: তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৩.০০১.০০০.০০.০০.০১.২০১৬-৩৪ অনুযায়ী সরকারিকরণের নিমিত্তে আদেশ প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক ১১/০৪/২০১৮ খ্রিঃ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়।
গত ০৪ আগস্ট ২০২০ খ্রিঃ তারিখে শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারিকরণের যে গেজেট/প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় সেখানে আমরা লক্ষ্য করি যে, মাধ্যমিক শাখার ২৮জন ও এসএসসি (ভোকেশনাল) শাখার ১১জন মোট ৩৯জন শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকা থাকলেও বিএম শাখায় কর্মরত ১৫জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম তালিকায় ছিল না। বিষয়টি আমাদেরকে হতবাক ও হতাশাগ্রস্থ করেছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে জানতে চাইলে তিনি রাজনৈতিক কারণসহ কয়েকটি অযৌক্তিক কারণ উল্লেখ করেন। যেমন- এইচএসসি (বিএম) শাখাটি কলেজ পর্যায় এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন হওয়া, ২০০৪ সালে বিএনপি ও জামাত সরকারের আমলে এমপিও ভুক্ত হওয়া, এইচএসসি (বিএম) কারিকুলাম জনাব তারেক জিয়ার উদ্যোগে প্রবর্তিত হওয়া। ইত্যাদি কিন্তু এসব কারণ অযৌক্তিক ও অগ্রহনযোগ্য কেননা আমরা ইতোমধ্যে এরুপ এইচএসসি (বিএম) শাখা সংযুক্ত কয়েকটি বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেখানে স্কুল ও সংযুক্ত (বিএম) শাখার সকল শিক্ষক-কর্মচারী সরকারিকরণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যেমন- হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট হাই স্কুল এণ্ড কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর (বিএম সহ), গোদাগাড়ী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গোদাগাড়ী, রাজশাহী (বিএম সহ), কয়রা মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কয়রা, খুলনা (বিএম সহ)। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানালেও তিনি কোন ধরনের পদক্ষেপ নেননি।
বর্তমানে বিএম শাখার শিক্ষক-কর্মচারীগণ বেসরকারি অবস্থায় কর্মরত থাকায় নানা বৈষম্য ও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীগণের টাইম স্কেল ও পদোন্নতির প্রাপ্যতা থাকলেও উহা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজন কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তার প্রাপ্য কল্যাণ তহবিলের অর্থ ও অবসর ভাতা উত্তোলনে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ভবিষ্যতে উক্ত শাখাটি অস্থিত্ব সংকটে পড়বে বলে অনেকেই ধারনা করছেন। এমতাবস্থায় উক্ত শাখায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীগণ তীব্র হতাশা ও নিদারুন কষ্ট নিয়ে তাদের দৈনন্দিন প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধবনের শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত থাকা যুক্তি সংগত নয় এবং ইহা বৈষম্যমূলক। তাই উক্ত শাখাটির শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারিকরণের ব্যবস্থা গ্রহনের জনা কর্তৃপক্ষ/প্রশাসন/সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। উল্লেখ্য যে, দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাথে সংযুক্ত এইচএসসি শাখা সরকারিকরণ হয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হলো- আদিতমারী গিরিজা শংকর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, আদিতমারী, লালমনিরহাট, জাহাঙ্গীরপুর বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মহাদেবপুর, নওগাঁ, সাঁড়া মাড়োয়ারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ঈশ্বরদী, পাবনা, ক্ষেতলাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, জয়দেবপুর, গোদাগাড়ী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গোদাগাড়ী, রাজশাহী (বি.এম সহ), কয়রা মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কয়রা, খুলনা।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমানের বক্তব্য জানা যায়নি।