ইফতেখার হোসেন, চট্টগ্রাম ব্যুরো – নানা ধরনের অনিয়ম, অভিযোগ ও শৃঙ্খলা বহির্ভূত কার্যক্রমের সাথে জড়িত এবং সকল অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরও বারবার স্কুল কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে সেলিম আফজল নামে এক ব্যক্তিকে।চট্টগ্রাম নগরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে নানা অভিযোগ ও অনিয়ম থাকার পরও সেলিম আফজল নামে এক ব্যক্তিকে সভাপতি করে কমিটি অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত করার উদ্দেশ্যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবু নাছের এর সন্তান মো. ইফতেখার আহমেদ অভিযুক্ত সভাপতি পদে আসীন হওয়া সেলিম আফজলের নানা অনিয়ম এবং অবৈধভাবে সভাপতি পদ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নীতিমালা ১১ এর (গ) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী বা ইহার সুনাম নষ্ট এরূপ কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে অথবা কোনোভাবে উহার সহায়তা করে এমন কোনো ব্যক্তি সদস্য হবার বা কমিটিতে থাকার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
অথচ কমিটিতে প্রস্তাবিত সভাপতি সেলিম আফজল বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বোর্ডে অভিযোগ এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ ফাইল আকারে শিক্ষা বোর্ডে রয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা সেলিম আফজল ইতোপূর্বেও দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি সভাপতি ছিলেন। তখন বিভিন্ন অপকর্ম ও অনিয়ম করায় ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেছিলেন বর্তমান নির্বাচিত কমিটির ১ নম্বর অভিভাবক সদস্য সৈয়দ আনোয়রুল করিম।
জানা যায়, অভিযুক্ত হওয়ার পর সেলিম আফজল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পুনরায় সভাপতি হতে পরিকল্পিতভাবে একটি সাজানো নির্বাচন করার চেষ্টা করেন। এলাকার লোকজন অংশগ্রহণ না করে ভোট বর্জন করায় নির্বাচনটি স্থগিত হয়।বিদ্যালয়ে তার ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০২০সালের ৬ জানুয়ারিতে শিক্ষা বোর্ডে আরও একটি অভিযোগ দায়ের কারেন এলাকর মেম্বার মোতাহের, সেলিম রেজা, মোহাম্মদ আব্দুল কাদের ও আব্দুর রব। পরে সেলিম আফজলের দুর্নীতি বুঝতে পেরে বিদ্যালয় কমিটি থেকে তাকে অপসারণ করে শিক্ষা বোর্ড।
এরপর শাহাব উদ্দিনকে সভাপতি করে বিদ্যালয় পরিচালনায় একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। পুনরায় কমিটিতে ফিরতে তখন থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সেলিম আফজল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অনুদান দিয়ে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো অনুদান ছাড়াই ২০২২ সালে নিজেকে দাতা সদস্য করার দাবি তোলেন সেলিম আফজল। ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ণ করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মাধ্যমে তাকে দাতা সদস্য করতে শিক্ষাবোর্ডে দরখাস্ত করেন তিনি। শিক্ষাবোর্ডও কিছু যাচাই না করে তাকে দাতা সদস্য করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করে। তখন বিদ্যালয়ে অনুদান দেওয়ার কোনো রসিদ দেখাতে না পারায় সেলিম আফজলকে দাতা সদস্য করার সুপারিশটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পরবর্তীতে চলতি বছরের ১০ জুন বিদ্যালয়ের কোনো পদে না থেকেও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বোর্ডে একটি আবেদন করে সেলিম আফজল।
দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার সাথে যুক্ত হাজী আবু নাছের এর পুত্র ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী দৈনিক সরেজমিন বার্তাকে জানান , সেলিম আফজল সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার নৈতিক কোনো পথই নেই ।
তিনি আরো বলেন, দাতা সদস্য হওয়ার জন্য উনি স্কুলের সাথে প্রতারণা করেছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্কুলের বেইজ,পরিচয় পত্র দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্কুলের শিক্ষক বেতন তুলতে গেলে সেলিম আফজল কে অগ্রিম টাকা না দিলে বেতন উত্তোলন করা সম্ভব হতো না বলেও জানান তিনি।
সাবেক কমিটির সদস্য নুরুল বসর দৈনিক সরেজমিন বার্তাকে জানান,বিভিন্ন অপকর্ম ও অনিয়ম করায় ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেছিলেন বর্তমান নির্বাচিত কমিটির ১ নম্বর অভিভাবক সদস্য সৈয়দ আনোয়রুল করিম।
এ সময় অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় সেলিম আফজলের সাথে তিনি দৈনিক সরেজমিন বার্তাকে জানান,দাতা সদস্য হওয়ার জন্য আমি বিদ্যালয় ফান্ডে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। সম্পর্ক ভাল থাকায় তখন আমি রশিদ গ্রহণ করিনি।পরে দাতা সদস্য করার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বলা হলে তিনি শিক্ষা বোর্ড অথবা কোর্টে যেতে বলেন। তাই আমি শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলাম। আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত তাই আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে সমাজে ছোট করার জন্য আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে এই সব অপপ্রচার কোন ভিত্তি নেই।
এ দিকে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলি দৈনিক সরেজমিন বার্তা কে জানান, দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে কমিটি বাতিল ঘোষনা করা হবে।