মাসুম বিল্লাহ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
রবিবার সিরিয়ার বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দিয়েছে। বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্ক দখল করে আসাদকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে, যা তার পরিবারের কয়েক দশকের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
বিদ্রোহীদের বিজয় ও জনগণের উচ্ছ্বাস
বিদ্রোহীদের প্রধান নেতা আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি এক বিবৃতিতে বলেন, “ভবিষ্যৎ আমাদের।” দামেস্কের কেন্দ্রীয় চত্বরে হাজার হাজার মানুষ গাড়ি ও পায়ে হেঁটে জড়ো হয়েছিলেন। তারা আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান উদযাপন করে “স্বাধীনতা” স্লোগান দিয়েছেন।
আল-রাউদা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসেও জনসাধারণ প্রবেশ করেন এবং কেউ কেউ সেখান থেকে আসবাবপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন। কয়েক দশক ধরে বন্দি থাকা কয়েদিদের মুক্তির খবর উদযাপনে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। সদ্য মুক্ত হওয়া কয়েদিরা হাত উঁচিয়ে নিজেদের বন্দি অবস্থার সময়কাল জানাতে থাকেন।
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন
বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রা রাশিয়া ও ইরানের জন্য বড় ধাক্কা। দীর্ঘদিন ধরে তারা আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। তবে সাম্প্রতিককালে অন্যান্য সংকটে ব্যস্ত থাকায় তারা বিদ্রোহীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আসাদের পতন ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আঘাতের সরাসরি ফলাফল।” ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ সিরিয়ার জনগণের সাহসিকতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “বর্বর শাসনের অবসান ঘটেছে।”
নতুন নেতৃত্বের সামনে চ্যালেঞ্জ
আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সামনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশটির বিভিন্ন সম্প্রদায় ও দলকে একত্রিত করা এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
বিদ্রোহীদের জোট একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “সিরিয়ার মহান বিপ্লব শাসন পরিবর্তনের সংগ্রাম থেকে একটি নতুন সিরিয়া গঠনের দিকে এগিয়ে গেছে, যা জনগণের ত্যাগের প্রতি উপযুক্ত সম্মান জানাবে।”
তবে, চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর পুনরুত্থান ও সম্ভাব্য সংঘাত নতুন নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এই সময়ে সিরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য চাপের মুখে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সিরিয়ায় মোতায়েন থাকা ৯০০ সেনার অবস্থান পরিবর্তন করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাকান ফিদান সতর্ক করেছেন, “সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কতটা শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর হয় তার ওপর। মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।
সবশেষে, সিরিয়ার জনগণের জন্য বিদ্রোহীদের বিজয় একটি মুক্তির বার্তা হলেও সামনের দিনগুলো আরও কঠিন ও জটিল হতে পারে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পুনর্গঠনের জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
প্রতিবেদন: আল-কায়েদা, লেবানন, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইসরায়েল ভিত্তিক সূত্র।
-মা/বি/সরে/জ