
বিশেষ প্রতিবেদন:
সাংবাদিকতা পেশাটি শুধু খবর সংগ্রহ করা নয়, বরং এটি একটি দায়িত্বশীল ও সাহসী ভূমিকা পালন করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য। সাংবাদিক কামরুল হুদা হলেন এমনই একজন নিবেদিতপ্রাণ সংবাদকর্মী, যিনি দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করেছেন। তাঁর লেখনীর ধার, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ তাঁকে সাংবাদিকতার জগতে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
কামরুল হুদা ১৯৬২ সালের ৩ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা আলহাজ্ব সামশুল হুদা এবং মাতা ছিলেন আনোয়ারা বেগম। তিনি ছিলেন পরিবারের ৭ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান।
তিনি দোহাজারী জামিজুরী আবদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মায়। সে সময় তিনি গ্রাম থেকে শহরে হলুদ খামে করে পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন। পত্রিকা কেনার জন্য দুপুরের খাবারের টাকা বাঁচিয়ে রাখতেন, যা তাঁর সাংবাদিকতা ও লেখালেখির প্রতি একাগ্রতার পরিচায়ক।
লেখালেখির প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি জাতীয় গণমাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পান এবং ধীরে ধীরে সাংবাদিকতা জগতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন।
তিনি দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক কর্ণফুলী পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি নিউজগার্ডেন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কামরুল হুদা তাঁর কর্মজীবনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দৈনিক কিষাণ, দৈনিক শক্তি, দৈনিক স্ফুলিঙ্গা, রূপালী দেশ, দৈনিক মিল্লাত, ইকামত, সমতা, দৈনিক সেবক, গণআশা, দৈনিক ঈশান, সমকাল ডাইজেস্ট, দৈনিক আজকাল খবর, দৈনিক দেশ বার্তা, দৈনিক নয়াবাংলা-সহ বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাঁর সাংবাদিকতা শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি শিক্ষা, সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে ট্রেনি অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসায়ও সম্পৃক্ত ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি জাতীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চের চট্টগ্রাম সভাপতি এবং গ্রিন গ্লোবাল ফেলোশিপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ইউনিভার্সাল ব্রাদারহুড-বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আল ইখওয়ান ইন্টারন্যাশনাল-এর পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। সাংবাদিক কামরুল হুদার কর্মজীবন ও অবদান প্রমাণ করে যে সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তাঁর নিষ্ঠা, সততা ও দায়িত্ববোধ তাঁকে আজও সাংবাদিক মহলে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করে রেখেছে। তাঁর জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হবে।