

মাইশা ফাইরোজ, চট্টগ্রাম ব্যুরো- ধর্মের গোড়ামিতে আমাদের সংস্কৃতির জায়গা দখল হয়েছে। এই দখল রুখতে চর্চা করতে হবে আমাদের হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য। সেজন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাসবিদ ও লেখক ড. মুনতাসীর মামুন।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রঙ্গণে ‘চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব ও বইমেলা’র সমাপনী আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লুবা নাহিদ চৌধুরী।
ড. মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিল্পকলা একাডেমির যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই ৭৪ সালে। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৫১ বছর বয়সে একটা রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে পারলেন অথচ আমরা কিছুই পারছি না। এর একটাই কারণ তিনি যা ভেবেছেন তাই করেছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে।
এর আগে সকালে ‘চট্টগ্রামের লোক মেলা’ শীর্ষক সেমিনারের মধ্যে দিয়ে অনুষ্টান শুরু হয়। ড. মোহাম্মদ শামসুদ্দিন শিশিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন কবি শিশির দত্ত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক সুভাষ দে।
সভাপতির বক্তব্যে শিশির দত্ত বলেন, নানা বৈচিত্র্যময় ঘটনার মাধ্যমে চট্টগ্রামে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে। চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা চট্টগ্রামকে অবহেলা করেছেন, এই অবহেলার কারণে চট্টগ্রাম তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলেছে।
উপমহাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামেই প্রথম সংগীত স্কুলের হাতেখড়ি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংগীত স্কুল প্রথম গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামে, ১৯৩৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে রেঙ্গুন এবং ১৯৩৭ সালে কলকাতায় সংগীত স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়।
সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম তার স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের যে সাংস্কৃতিক উপাদান আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেলা। এই মেলা রক্ষা করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। অন্যথায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও লোকমেলাগুলো।
এসময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও চট্টগ্রামকে সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবী জানান তিনি। এসময় বক্তৃতা করেন, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ, ড. আজাদ বুলবুল, ড. শ্যামল কান্তি দত্ত প্রমুখ।
সন্ধ্যায় ভারতের রাজস্থানের সংগীত দল ‘জয়সিলমির বিট’-এর মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনায় শেষ হয়েছে হাটখোলা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব ও বইমেলার তিন দিনের আয়োজন।
ছবি: চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব ও বইমেলা’র সমাপনী আয়োজনে বক্তব্য রাখছেন ইতিহাসবিদ ও লেখক ড. মুনতাসীর মামুন।