মোজাহের ইসমাইল নাঈম, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালী জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে পথচারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় জিলা স্কুলের গেটের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দাবি, তাদের মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে তার পাল্টা জবাব দেয় ছাত্রলীগ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, মিছিল নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জিলা স্কুলের সামনে গেলে স্কুলের ভেতর থেকে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাল্টা স্কুলের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ইট পড়ে প্রধান সড়কে কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ করে চারদিকে ছোটাছুটি করে মানুষ। এতে পথচারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিবুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ওপর কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলার প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে সদর উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগ। মিছিলটি জিলা স্কুলের সামনে গেলে হামলা চালানো হয়। কোটা আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টাকারী আন্দোলনরতদের মধ্যে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী শিক্ষার্থীরা এই হামলা চালিয়েছে। আমরা প্রতিহত করেছি।’
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামছুল হুদা বাপ্পি বলেন ‘জেলা ছাত্রলীগের মঙ্গলবারের কর্মসূচি স্থগিত করে বুধবার নেওয়া হয়েছে। তবে বিকালে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের শোডাউনে হামলা চালিয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। এতে আমাদের সাত-আট জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে মাঠে থাকা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সদস্য ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকালে মাইজদীতে আমাদের কোনও কর্মসূচি ছিল না। আমরা সকালে বিক্ষোভ মিছিল করে যে যার মতো বাসায় চলে এসেছি। এটা কারা করেছে, তা আমাদের জানা নেই। এ ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়।’
সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় জেলা স্কুলের জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। কতজন আহত হয়েছে, তা জানা যায়নি।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সাধারণ ছাত্রদের পরিচয়ে এরা আসলে কারা ছিল সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
এর আগে সারা দেশে কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাইজদীর প্রধান সড়কের বিশ্বনাথের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি সড়কের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৌর বাজারের সামনে এসে সড়কে বসে অবরোধ করেন তারা।