মো:নুর ইসলাম সবুজ,
লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে। মিলিটারি ফোর্স, গেরিলা বাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। শত্রু সৈন্য ও তাদের দোসররা রেলযোগে রংপুর, সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরে পালিয়ে যায়।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় শহর হওয়ায় এখানে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারিরা পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করত। তারা সহজেই বাঙালিদের ওপর হামলা চালায় এবং নারীদের তুলে নিয়ে গিয়ে সেনা ক্যাম্পে অমানবিক নির্যাতন চালাত। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল হেলিকপ্টারে করে পাকিস্তানি সেনারা লালমনিরহাটে আসে।
ওই দিন লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে তৎকালীন লালমনিরহাট থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেন ও স্থানীয় বাঙালিরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে। এতে অনেক পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী নিহত হয়। এই আঘাতে ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানি সেনারা ৪ ও ৫ এপ্রিল বিহারি ও রাজাকারদের সহায়তায় লালমনিরহাটে নৃশংস গণহত্যা চালায়। শিশুসহ নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করে এবং তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। তরুণী ও কিশোরীদের তুলে নিয়ে যায়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর জানান, ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী রেলওয়ে হাসপাতালে হামলা চালিয়ে আহত অবস্থায় ১ এপ্রিল আহত চিকিৎসাধীন ওসি মীর মোশাররফ হোসেনকে হত্যা করে। একই সঙ্গে চার চিকিৎসককেও নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ৫ ও ৬ এপ্রিল সেনারা রেল কর্মচারী ও স্থানীয়দের হত্যা করে এবং নিহতদের মরদেহ রেলওয়ে অফিসের পাশের ঝোপে পুঁতে রাখে। যা বর্তমানে লালমনিরহাট রেলওয়ে গণকবর।
৬ ডিসেম্বর তিস্তা ব্রিজে শত্রু সেনাদের সঙ্গে মিলিটারি ফোর্স ও গেরিলা বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয়। শত্রু বাহিনী ব্রিজের দুইটি স্প্যান ধ্বংস করে রংপুর সেনানিবাসে পিছু হটে। পরে মিলিটারি ফোর্স, গেরিলা বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা লালমনিরহাট শহরে প্রবেশ করে।
এ সময় চারদিকে বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো মানুষ নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু শহরে এসে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে।