পার্বত্য বান্দরবানের লামা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২ং ওয়ার্ড সদস্য কুতুব উদ্দিনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। এলাকায় একের পর এক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যুতা, অস্ত্রবাজি করেও কিভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে? এমন বিস্ময়কর প্রশ্নে হতবাক স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি, চুরি, প্রতিপক্ষকে হত্যার চেষ্টা, প্রতারণা, ডাকাতির প্রয়াস, অস্ত্র মামলাসহ আরো বহুবিদ অপরাধের অভিযোগে প্রায় ২০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। কতিথ আছে কুতুবউদ্দিন মেম্বার বান্দরবান জেলার প্রয়াত আওয়ামী নেতা (মেয়রের) আশির্বাদপুষ্ট ছিলেন। সে সুযোগে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে সে অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে। অনুসন্ধানে জানাযায়, তার বিরুদ্ধে ২০টির ও বেশি মামলার মধ্যে ১১টি মামলায় ৩৭৯ চুরির ধারা, ৬টি মামলায় ৪২৭ ধারা, ৯টি মামলায় ৪৪৭ ধারা, ৫টি মামলায় ৪৪৮ ধারা, ১৩টি মামলায় ১৪৩ ধারা, ১৪টি মামলায় ৩২৩ ধারা, ৪টি মামলায় ৩৮৫ জামিন অযোগ্য ধারা, ৯ মামলায় ৫০৬ ধারা, ৭ মামলায় ৩৪ ধারা, ৭ মামলায় ৩০৭ ধারা, ৪ মামলায় ৩৮০ধারা ও ১টি মামলায় দ:বি: ১১৪ ধারায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কুতুবউদ্দিন মিয়া। একটি মামলায় কুতুবউদ্দিনের তিন বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ড ও এক হাজার টাকা দন্ডিত করেন বিজ্ঞ আদালতের হাকিম। সর্বশেষ চলতি মাসে তার বিরুদ্ধে লামা থানা ও আদালতে আরো দু'টি মামলা হয়েছে। এর পরও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায় সে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর এক গডফাদার কুতুব উদ্দিন মেম্বার।
১৯ অক্টোবর লামা থানায় অস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে গাছ লুট করে নেয়ায় কুতুব উদ্দিনসহ ১২ জনকে আসামী করে সাহেদা আক্তার (৫০), স্বামী- দীল মোহাম্মদ, নামের এক নারী একটি এজাহার দাখিল করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, '১৮ অক্টোবর সকাল অনুমান ৯টার সময় বিবাদীগণ সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী লোক হাতে ধারালো দা, কাটাযুক্ত লেজা (চেইনে ব্যবহৃত লোহার পিনিয়াম) লোহার রড ও লাঠি-সোঠা ইত্যাদি নিয়ে সাহেদা আক্তারের রাবার/৫২নং হোল্ডিং রাবার বাগানের টেপার ও শ্রমিকদেরকে রাবার বাগান হতে কষ আহরণ করতে নিষেধ করে। বাঁধা দিতে গেলে সশস্ত্র কুতুবসহ তার বাহিনী চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বাগান মালিক সাহেদা আক্তার ও তার লোকজনকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয় ব্যাপক উপস্থিতি ঘটলে কুতুব বাহিনীর সন্ত্রাসীরা চলে যায়। ওই সময় আহতদেরকে উদ্ধার করে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে সাহেদা আক্তারের মাথায় গুরুতর জখম হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করে।
একই দিন দিবাগত রাত ১০টার সময় কুতুব উদ্দিনের সক্রিয় নেতৃত্বে চিহ্নিত ১২জনসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী দল দেশীয় বন্দুক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাগান থেকে ৪৫/৫০ বছর বয়সী ২৩টি মাদার ট্রি (গর্জন গাছ), ১০/১২ বছর বয়সী ১২টি মাদার ট্রি (গর্জন গাছ), ৪৫/৫০ বছর বয়সী ৫টি কড়ই গাছ, একই বয়সী ২টি বোয়ারা গাছ, ১টি সাপালিশ কাঠাল গাছ, একই বয়সী ১৮টি রাবার গাছ, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকা কেটে ফেলে। সন্ত্রাসী কুতুব উদ্দিনসহ তার বাহিনী সারারাত গাছ কেটে টুকরো করে ভোর ৪ টারদিকে ছোট পিকআপ ও ডাম্পার গাড়িযোগে অনেকগুলো গাছ নিয়ে যায়। মামলার এজাহারে অন্যান্য যাদেরকে আসামী করা হয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে,
রবিউল হোসেন (৩৫), পিতা- আব্দু শুরুর, ৩। জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), পিতা- অজ্ঞাত, ৪। সাইফুল ইসলাম (২৮), পিতা- ছালেহ আহমদ, ৫। লোকমান (২৫), ৬। রিদোয়ান (২৭), উভয় পিতা- ছলিম উল্ল্যাহ, ৭। হামিদ হোসেন (৪৮), পিতা- মৃত আব্দুল করিম, ৮। শামশুন নাহার (৪৭), স্বামী- ছলিম উল্ল্যাহ, সর্ব সাং- পাগলির আগা, ২নং ওয়ার্ড, ৯। মো: মিনার (২৮), পিতা- শাহ আলম, সাং- কুরুপপাতার ঝিরি, ২নং ওয়ার্ড, ১০। আব্দুর রহিম (২০), পিতা- গোলাম কাদের, ১১। বাবুল শরীফ (২১), পিতা- গোলাম শরীফ, উভয় সাং- অংশার ঝিরি, ৩নং ওয়ার্ড, ৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন, সর্ব থানা- লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা, ১২। মো: ইসলাম (৩৫), পিতা- নুরু, সাং- রংমহল, ৯নং ওয়ার্ড, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন, থানা- চকরিয়া, জেলা- কক্সবাজার। অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জন রয়েছে। সাহেদা আক্তার আরো জানায়, তার করা কুতুব উদ্দিন এর বিরুদ্ধে বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বান্দরবানে জি.আর. আরো একটি মামলা ১৬৯/২০২২ সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে। রয়েছে লামা থানার নন এফ আই আর প্রসিকিউশন নং- ০৪/২০২৩ বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে। স্থানীয়রা জানায়, কুতুব উদ্দিন মেম্বার গত ৫ আগস্টের পর অনেক বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামীলীগের নেতা। এলাকাবাসী তার বিগত জীবনের কর্মকান্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ৫ আগস্ট তার বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর থেকে সে তার বাহিনী নিয়ে জঙ্গলে অবস্থান নেয়। জানাযায়, রাতের আঁধারে পুরো ইউনিয়নের রাজ্যত্ব কুতুব উদ্দিনের নিয়ন্ত্রনে চলে। মানুষের বাড়ি ঘর, গরুর গোয়াল, পুকুর জলাশয়, রাবার, বন বাগান, দোকানপাটে, কুতু্ব বাহিনী ও তার সহযোগি আরেকটি 'ট্যাঙ্গার বাহিনী' এর কাছে জিম্মি হয়ে যায়। এই বিষয় লামা উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।