পার্বত্য বান্দরবানের লামায় উপজাতি বাঙালি সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারী একটি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা লাগামহীনভাবে মানুষের সম্পদ লুট করে চলছে। অক্টোবর-২৪ লামা উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এ বিষয়ে লামা থানায় এজাহার হলে, দুস্কৃতিকারী চক্রের আগ্রাসন আরো বেড়ে যায়। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা দেখা দেয়। এ সময়টিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে লুটেরা ও সন্ত্রাসী এটি চক্র। তারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষের সম্পদ বেপরোয়া ভাবে লুট করছে। উপজেলার সরই ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে একের পর এক লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও কোন দুষ্কৃতিকারীকে আইনের আওতায় আনা হয় নাই এখনো। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাধারণ মানুষের জান ও মাল রক্ষায় লামা থানার পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করার পরেও বন্ধ হয় নি দূর্বৃত্তদের লুটপাট কার্যক্রম। ভুক্তভোগীদের হিসাব মতে ৫ই আগস্ট পরবর্তীত পরিস্থিতে সন্ত্রাসী চক্র সুযোগ বুঝে লুটপাট চালিয়ে সাধারণ মানুষের প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদ লুট করেছে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সম্প্রতি সরই পুইট্যা ঝিরি এলাকার বাসিন্দা মোঃ সোহরাব হোসেন লামা থানায় দায়েরকৃত একটি এজাহারে জানিয়েছেন; সরই ইউনিয়নের টঙ্গঝিরি পাড়ায় চিহ্নিত কিছু পাহাড়ী- বাঙ্গালী একটি বাগান ও খামারে হামলা চালিয়ে প্রায় দু’শটি গরু, শতাধিক ছাগল, বারটি পুকুরের মাছ এবং শত একর জায়গার গাছ লুট পাট করে নিয়েছে। এই বিষয়ে ১৩ জন কে আসামী করে মামলা দায়ের করার পর অভিযুক্তরা মামলার বাদীকে প্রান নাশসহ আরো ক্ষতি সাধনের হুমকি দিচ্ছে বলে দাবি করেছে মামলার বাদী। লামা থানায় দায়েরকৃত এজাহারে আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে; মাহমুদুল (৪৫), শফিক (৩০), হায়দার আলী (৫০), মোহাম্মদ আজম উদ্দিন (৩০), দেলোয়ার (৫৫), জগদীশ (৪০), মোঃ গিয়াস উদ্দিন (৩০), জনি ত্রিপুরা (৩০), রনি ত্রিপুরা (৩২), শতিমান ত্রিপুরা (৩৫), চন্দ্রমনি ত্রিপুরা (৩৩), শদুচন্দ্র ত্রিপুরা (৫৫), অবৈদ্য ত্রিপুরা (৩৫) সহ আরো ৩০/৩৫ জন অজ্ঞাত নামা। আসামীরা সকলেই একই এলাকার বাসিন্দা বলে প্রকাশ করা হয়। এই মামলার আগেও লামা থানায় আরো কয়েক অভিযোগ করা হয় বলে জানাযায়। প্রতিটি অভিযোগের পরই সংবদ্ধ ওই লুটেরা চক্রটি ারো লাগামহীন হয়ে উঠে। অনুসন্ধানকালে স্থানীয়রা জানান, ফেয়ারি এগ্রো কমপ্লেক্সের ভূমি প্রতিনিয়ত জবর দখল করার পায়তারা করে গাছগাছালী লুটপাট করে নিচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দা পাইসা প্রু ত্রিপুরা, জোহান হেডম্যান, হালিম মেম্বার গং এসব করছে। এই গ্রুপটি আলীকদম উপজেলার তৈনখাল এলাকা থেকে ত্রিপুরা উপজাতি পরিবার, ও লামা উপজেলা সরই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড পুইট্যাঝিরি থেকে বাঙালি ও ত্রিপুরা পরিবারকে জমির মালিক বানিয়ে দিবে বলে ফেয়ারি এগ্রো কমপ্লেক্সে জমি জবর দখল, গাছপালা লুট করাচ্ছে। ভবিষ্যতে পাহাড়ি বাঙ্গালি দ্বন্ধ সৃষ্টি করার জন্য এসব করা হচ্ছে; এমন মন্তব্য করেছেন সরই ইউনিয়নের সুশীল সমাজ। স্থানীয়রা জানান, ইতোপূর্বে বহিস্কৃত ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যান ভূমি সন্ত্রাস জোহান ত্রিপুরা উপজাতি সন্ত্রাসীদের মুল হোতা এবং সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম নামের অপর একজন জবর দখলকারীদের মুল হোতা। জোহান ত্রিপুরা এর আগে বিগত ২০১৩ সাল থেকে ডলুছড়ি মৌজাস্থ ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি’ এর লীজকৃত রাবার বাগান এর চার শ্ একর ভূমি দখল করিয়েছে। পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মদদপুষ্ট জোহান ত্রিপুরা হেডম্যান সেখানে লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে উপজাতি এনে পাড়া তৈরি করিয়েছে। ঠিক একই স্টাইলে এখন ফেয়ারি এগ্রো কমপ্লেক্সের ভূমি দখল করে পাহাড়ি বাঙালি আরেকটি ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে। পাহাড়ি উগ্র সন্ত্রাসীদের মদদপুষ্ট জোহান ত্রিপুরা সব সময় নানান কৌশলে পাহাড়ি বাঙালীর মধ্যে ইস্যু তৈরি করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে বলে স্থানীয়রা জানায়। ৩ ডিসেম্বর মিথ্যা প্রলোভনে দেখিয়ে কিছু সংখ্যাক ত্রিপুরা উপজাতি ও বাঙালি নিয়ে বান্দরবানে মানববন্ধন করায়। সেখানে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কথা বলায় ও সেখানকার সাংবাদিকদের দিয়ে ভুলবাল মনগড়া তথ্য পরিবেশন করায় বলে জানান স্থানীয়রা। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে আরো জানাযায়, বর্তমানে ফেয়ারি এগ্রো কমপ্লেক্সের বাগানে পাইসা প্রু ত্রিপুরা আর শফিক নামের একজনের প্রকাশ্য নেতৃত্বে গাছ কর্তন হচ্ছে। কমপ্লেক্সের বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্যমান ডেইরী ফার্মের সেটের টিন সহ মুল্যবান জিনিস পত্রাদি নিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে জড়িত আছে, সাবেক মেম্বার আবদুল হালিম, মোঃ ফিরোজ, পিতা আনসার আলী, আশাপুর, পিতা অজ্ঞাত, সাং পদ্মানঝিরি। এসব গাছের ক্রেতা হচ্ছে, গুনু মিয়া, পিতা আবদুল করিম ও তার সহোদর মাহমুদ, সাং ডবল ব্রিজ ৬নং ওয়ার্ড সরই। তারা দিনভর গাছ কেটে রাতে এসব কাঠ গাড়ি যোগে পাচার করে বলে জানাযায়। অনুসন্ধানে জানাযায়, সেখানে বিগত এক দশক আগে থেকে প্রায় তিন শ্ একর পাহাড়ি ভূমি মালিকানা অর্জন করে ফেয়ারি এগ্রো কমপ্লেক্স নামের একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। রাবার হর্টিকালচার লীজ প্লট ছাড়াও স্থানীয় ব্যক্তিমালিকদের থেকে যথানিয়মে ভূমি ক্রয় করেন প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধানকালে ইসমাইল নামের একজন জানায়, ফেয়ারি এগ্রো কমপ্লেক্স এর স্বত্বাধিকারী সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফজিয়া ইসলাম তার ৭/৮ একর পাহাড়ি ভূমি দখল করে ও সৃজিত গাছগাছালী কেটে নেয়। এসব বিষয়ে ইসমাইল কোনো মহলের কাছে ন্যায় বিচার পাননি, উল্টো তাকে ও তার পরিবারের লোকদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। ইসমাইলের ছেলে শফিক জানায়, তাদের জায়গার একাংশ জোরপূর্বক দখল করে ফেয়ারী এগ্রো কমপ্লেক্সের ফটক নির্মাণ করেছে। ফার্মের কর্মচারীরা জানান, শফিক, মাহমুদসহ কয়েক মিলে প্রতিনিয়ত তাদের প্রাণ নাশ, প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিযংযোগের হুমকি দিচ্ছে।
এইসব ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা থানা অফিসার ইনচার্জ লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহাদাৎ হোসেন জানান, ‘সোহরাব নামের একজন লামা থানায় এজাহার দাখিল করেছেন। অভিযোগ সমূহ তদন্ত করার জন্য তদন্ত অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। তদন্তকারী অফিসার সরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর জোনায়েদ এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘আমি সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে কয়েক দফা অভিযান করেছি, গাছ কাটাসহ লুটতরাজের আলামত প্রত্যক্ষ করি। আগে থেকে পুলিশের আগমন টের পেয়ে তারা লুকিয়ে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় আমার অভিযানকালে সুন সান নিরবতা, সেখানে কাকপক্ষীও যেন থাকেনা’। তিনি আরো জানান, সেখানকার মেম্বার নাসির উদ্দিনকে ডেকে এদের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়, সে জানায়, ‘ওরা ত্রিপুরা উপজাতি কারো কথা শুনেনা’।
অপরদিকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি এলাকার মোঃ এরশাদ সওদাগর জানিয়েছেন, ফাঁসিয়াখালী এলাকায় ট্যাঙ্গার গ্রুপ নামক একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তার খামারের ৭ লক্ষ টাকা মূল্যের ২ টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করায় সন্ত্রাসীরা উল্টো হুমকি দিচ্ছে। ফাঁসিয়াখালী এলাকার সাবেক ২ মেম্বার এর নেতৃত্বে ট্যাঙ্গাগার গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় মর্মে অভিযোগ উঠেছে।