
লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা:
আবহমান কাল থেকে এই মৌসুমে পাহাড়ি খাল ছড়া, নদীর এসব উর্বর জমিতে আলু, বাদাম, পেঁয়াজ, রশুন মরিচ, কোমড়া, বেগুন ইত্যাদি শীতকালীন হরেক রকমের সবজি-ফল চাষ করতেন।
বিগত চার দশক ধরে কৃষকরা তামাককেই প্রধান ফসল বিবেচনা করায় নগদ অর্থের প্রলোভনে অন্য ফসল চাষের কথা ভুলে গেছেন। মাটির প্রতিটি কোণ তামাক পাতার সবুজ চাদরে ঢেকে গেছে। মাটিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় জমির উর্বরতাও নষ্ট হতে থাকে।
তামাক চাষের এই ভয়াল তান্ডবে পার্বত্য লামার খালবিল, নদী, ছড়া সবই দখল দূষনের কবলে। দৃষ্টি সীমার পুরোটাই শুধু তামাক চাষের ভয়াবহ বিস্তারের হতাশা ব্যঞ্জক চিত্র। মাঠ, ঘাট, নদী চর, ঝিরির কিনারা; কোনো কানে মাটির ইঞ্চি পরিমান জায়গাও খালি নেই। সবখানেই তামাক খেত।
ফলে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালনসহ অন্যান্য কৃষিকর্মও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। তামাকের জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করার কারণে জমি থেকে নদী, জলাশয়ের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে। জীব-বৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মানুষের পুষ্টির যোগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে শিশুসহ সকলে পুষ্টিহীনতায় ভোগার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে তামাকের ক্ষেতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োগ এবং তামাক চাষ ও বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে তোলার প্রক্রিয়ায় কৃষক, শ্রমিক, নারী ও শিশু নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তামাক পক্রিয়াজাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে শিশুদেরকেও লাগানো হয় এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। এর ফলে অল্প বয়সেই শরীওে বাসা বাঁধে নানা ধরনের রোগ।
তামাকের কাঁচা পাতার সংস্পর্শে থাকা, জমিতে প্রচুর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করার কারণে কৃষকরা নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে গ্রিন টোব্যাকো সিকনেস নামক একধরনের রোগ। এছাড়া তামাক গাছ মাটির পুষ্টি দ্রুত শেষ করে ফেলে। আস্তে আস্তে জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে বিশেষভাবে তৈরী চুল্লি ঘরে ৭২ ঘণ্টা তাপমাত্রা একই পরিমাণে ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে একদিকে যেমন বন উজাড় হয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে গবাদী পশুর খাদ্যও নিঃশেষ হচ্ছে। কারণ ধান, গম, ভূট্টা, সরিষা ও নানা ধরনের সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষ হলে গৃহপালিত প্রাণীর খাদ্যের অভাব হয় না। কিন্তু তামাক গাছ বা পাতার কোন অংশই প্রাণীর খাবার যোগ্য নয়।
ফলে এসব এলকায় বনের নানান প্রাণিসহ হাঁস, মুরগি গরু, ছাগলসহ গৃহপালিত প্রাণীর সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কৃষকদেরকে বিকল্প লাভজনক ফসলে অভ্যস্ত করতে হবে বলে মনে করেন সচেতন সমাজ।