
পার্বত্য বান্দরবানের লামায় ওমর ফারুক বেসু নামের এক ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ি ও তার স্কুল পড়ুয়া সন্তানের উপর হামলা হয়েছে। আহত বাপ ছেলে দু’জনকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করে লামা থানায় এজাহার দাখিল করেছেন ওমর ফারুখ। এজাহার নামীয় অভিযুক্তরা হলো, ০১. মোঃ হাসান (৩৩), ০২. মোঃ টিপু (২৯), উভয় পিতা- জয়নাল, উভয় সাং- টিটি এন্ড ডিসি, ০১নং ওয়ার্ড, ০৩। মোঃ শুরুর (৪৫), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- লামা মুখ, ০৫নং ওয়ার্ড। ০৪. মোঃ কামাল (৪০), পিতা- অজ্ঞাত, ০৫. মোঃ টিপু (৩২), পিতা- অজ্ঞাত, উভয় সাং- টিটি এন্ড ভিসি, ০১নং ওয়ার্ড লামা পৌরসভা। ০৬. মোঃ খোকন (৪০), পিতা- অজ্ঞাত, ০৭. মোঃ সেলিম (৪২), পিতা- অজ্ঞাত, উভয় সাং- নয়া পাড়া, ০২নং ওয়ার্ড লামা পৌরসভা। ০৮. মোঃ বাবুল (৫০), পিতা- অজ্ঞাত, ০৯. শামশু (৫৫), পিতা- অজ্ঞাত, উভয় সাং- মধুঝিরি, ০৭নং ওয়ার্ড, সর্ব লামা পৌরসভা, থানা- লামা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা সহ অজ্ঞাত নামা ৭/৮ জন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৮/০৯/২০২৪ইং তারিখ, বিকাল অনুমান ০৪.০০ ঘটিকা লামা বাজারস্থ উপজেলা পরিষদ এর সামনে মেইন রাস্তায় প্রকাশ্যে এই হামলা করানো হয়।
লামা জোত মালিক সমিতির লিঃ এর সভাপতি, সেক্রেটারি, ক্যাশিয়ার সহ আরও অন্যান্য লোকজন লামা বন বিভাগের কিছু দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাসহ অবৈধ ভাবে গাছ পাচার করে আসছে। ওমর ফারুখ ওইসব দূর্ণীতি সম্পর্কে জানতে পেরে তার প্রতিবাদ করে বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবরে একটি দরখাস্ত প্রেরণ করে। এর পর হতে লামা জোত মালিক সমিতি লিঃ এর সভাপতি, সেক্রেটারি, ক্যাশিয়ারসহ আরও অন্যান্য লোকজন তাদের অবৈধ ভাবে গাছ পাচার করতে পারছে না বিধায় ওমর ফরুকের ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতিপূর্বেও তারা হয়রানি করার জন্য বেশ কয়েকটি মিথ্যা বন মামলায় জড়িয়ে দেয় ওমর ফারুককে। তারই ধারাবাহিকতায় সেক্রেটারি, ক্যাশিয়ার এর ইন্দনে ও সহযোগিতায় ফারুক ও তার স্কুল পড়ুয়া ছেলের উপর অতর্কিত ভাবে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মেরে রক্তাক্ত জখম করে। হামলাকারীরা ওমর ফারুকের পকেট নগদ এক লাখ সাতাশ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত স্যামস্যাং এ৫৬ ব্যান্ডের একটি স্মার্ট ফোন যার মূল্য ৫৬ হাজার টাকা জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এজাহারে আরো উল্লেখ রয়েছে, হামলাকারী সকলে মিলে ওমর ফারুককে টানা হেচড়া করে প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাত নামা স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার শোর চিৎকার শুনে লোকজন আগাইয়া আসলে উল্লেখিত অভিযুক্তরাসহ অজ্ঞাত নামা ৭/৮ জন লোক দৌড়ে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা পালানোর সময় পথিমধ্যে ওমর ফারুকের ছেলে- মোঃ ইলিয়াছ (১৮) কে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মেরে রক্তাক্ত আহত করে। ওসময় ছেলের পকেটে থাকা নগদ বাইশ হাজার টাকা এবং আইফোন ১২ প্রো ব্যান্ডের একটি স্মার্ট ফোন যার মূল্য এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। “ঘটনার বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিংবা মামলা মোকদ্দমা করলে ফারখসহ তার পরিবারের লোকজনকে প্রাণে হত্যা অথবা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করার হুমকি দেয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন আহত বাদী ওমর ফারুক বেসু। এ বিষয়ে লামা জোত মালিক কাঠ ব্যসায়ী সমিতি লিঃ এর সভাপতি মোঃ সেলিম জানান, ‘এই ঘটনার সাথে আমি ও আমার সংগঠনের কারোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কাঠ ব্যবসা একটি স্পর্শকাতর ব্যবসা। এমনিতে অনেক দিন ধরে পারমিট বন্ধ থাকায় ব্যবসাও বন্ধ রয়েছে। আমরা ওমর ফারুকের উপর এই অনাকাঙ্খিত ও বিক্ষিপ্ত হামলার নিন্দা জানাই’। কাঠ ব্যবসায়ী সামচুল আলম জানান, ‘ওমর ফারুক নিজেই আমাদের মতন একজন ব্যবসায়ী। তার সাথে কোনোদিন আমার উচ্চবাচ্য হয় নাই। ব্যবসা বন্ধ থাকায় এমনিতে আমরা আর্থিক লোকসানে সংকটময় সময় পার করছি। কখন কার সাথে তার জগড়া বিবাদ হয়েছে সেটাও আমার জানা নেই। আমার সাথে জগড়া হয় নাই, এই ঘটনায় আমি নিন্দা ও দু:খ প্রকাশ করছি। এ ব্যাপারে লামা থানা অফিসার ইনচার্জ এর সাথে আলাপকালে তিঁনি জানান, এখনো কোনো অভিযোগ আসে নাই। আসলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গতঃ লামা বনবিভাগের তৈন রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বৃক্ষ উজাড় হয়। রিজার্ভ বাগানের বন উজাড়ের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই গাছ উজাড়ের ঘটনার জেরধরে দীর্ঘদিন ধরে লামা আলীকদম উপজেলায় ফ্রি জোতের কাঠ আহরণ পরিবহন (পারমিটের) কার্যক্রম বন্ধ রাখেন লামা বনবিভাগ। এক ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস যাবৎ এই এলাকায় কাঠ পরিবহন বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় বহু মানুষ। বাগান মালিক থেকে শুরু করে এই ব্যবসায় বিনিয়োগকারীরাসহ সাধারণ শ্রমিকরাও কষ্টে পতিত হয়। এই সমস্ত বিষয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ ওমর ফারুখ বেসুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে মর্মে ধারণা পোষন করছেন। মূলত: এই ক্ষোভ থেকে হামলার ঘটনা বলে মনে করে ‘ক’ অধ্যাক্ষর নামের এই ব্যবসায়ী।