
লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা:
লামায় ইউএইচএফও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে জেলা পরিষদের অস্বীকৃতি। ডেপুটি সিভিল সার্জনের নির্দেশে দায়িত্ব গ্রহণ(!)। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ডাঃ শোভন দত্তকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই। অপরদিকে সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ দিলীপ কুমার দেবনাথ ডাঃ শোভন দত্তকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য ডাঃ নুর মোহাম্মদকে নির্দেশ দিয়েছেন। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ শোভন দত্তকে অন্যত্র পদায়ন করেন। অপরদিকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কলসালটেন্ট (এ্যানসথেসিওলজি) হিসেবে কর্মরত ডাঃ নুর মুহাম্মদকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার শূন্য পদে প্রেষনে পদায়ন/নিয়োগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ডিও লেটার প্রেরণ করেছেন।
এদিকে ডাঃ শোভন দত্তকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মতামত ও অনুমোদনকে উপেক্ষা করে সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ দিলীপ কুমার দেবনাথ এর পত্র প্রেরণকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ নাগরিকরা।
সরকারের ২৮টি সরকারি বিভাগ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্ত। স্বাস্থ্য বিভাগ সমুহের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ অন্যতম।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খানজামা লুসাই গত ০৯ মার্চ-২৪ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবরে প্রেরিত ডিও লেটারে জানান, ‘লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এখিং মারমাকে রোয়াংছড়ি উপজেলায় বদলীর আদেশ জারী করা হয়। একই আদেশে ডাঃ শোভন দত্তকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে লামায় বদলী করা হয়’।
অধ্যাপক থানজামা লুসাই ডিও লেটারে আরও জানান, ‘তাঁর ভাষায় ডাঃ শোভন দত্ত কক্সবাজার জেলাধীন চকরিয়া উপজেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনক করাকালীন অর্থ আত্মসাৎ, হাসপাতালের উন্নয়নমূলক ও রিপেয়ারিং এর কাজ থেকে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ, সরকারী গাড়ি অপব্যবহার, বাসা ভাড়া অনিয়মসহ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অন্যান্য অভিযোগসমূহ এখনো বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর দপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগ কর্তৃক তদন্তাধীন। সুতরাং বর্ণিত কর্মকর্তার যোগদানপত্র গৃহীত হলে এবং তাঁর এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এমন কর্মকর্তাকে নিয়ে কাজ করা সমীচিন হবে না’ বলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পত্রে উল্লেখ করেছেন। একই পত্রে তিনি আরও জানান, ‘এই সকল কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না’।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে নিয়োজিত ডাঃ নুর মোহাম্মদ জানান, সোমবার সকাল থেকে ডাঃ শোভন দত্ত বহিরাগত ও অপরিচিত লোকজন নিয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তিনি বহিরাগত লোকজন নিয়ে হাসপাতালের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে বান্দরবান জেলা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। প্রেরিত পত্রের আলোকে এবং বহিরাগত ও অপরিচিত লোকজনের চাপের মুখে ডাঃ শোভন দত্ত কে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে’।
স্থানীয়দেরমতে এই বিভাগে প্রায়শই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লামায় দেয়া হয়। লামার বিশিষ্টজনরা ১০ মার্চে ডা: সুভন দত্তকে সিভিল সার্জনদ্বারা জোরপূর্বক দায়িত্ব নেয়াকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, এতে জেলাপরিষদকে অবজ্ঞা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার দাবি করেন স্থানীয়রা।