
নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে ক্যাম্প গুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে ডিসেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমান নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।
এখন চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যেকোনো সময় এই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফে পৃথক পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
আশ্রয়শিবির থেকে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হবে।
তারপর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সরকার সিদ্ধান্ত জানালে তাদের কে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে।
প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, স্থল ও নাফ নদী—দুই পথেই প্রত্যাবাসন হবে।
আরআরআরসি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান এবার স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নকে বেছে নেওয়া হয়েছে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্পের মধ্যে ২টি ঘুমধুমে তাতে নিরাপদ প্রত্যাবাসন সহজ হবে বলে জানিয়েছেন।
দেখা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মৈত্রী সেতুর (লাল ব্রিজ) উত্তরাংশে ঘুমধুম সীমান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ট্রানজিট ক্যাম্প ১২ অক্টোবর সেখানকার একখণ্ড জায়গা বুঝে নিয়ে ট্রানজিট ক্যাম্পের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। আরআরআরসি কার্যালয়।এই ক্যাম্পের পার্শ্বে ৩৪ বিজিবির একটি ক্যাম্প রয়েছে। মৈত্রী সেতুর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, সেখানে রয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) আরেকটি ক্যাম্প। ছোট্ট একটি খাল দুই দেশের সীমান্তকে ভাগ করে রেখেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, স্থলপথে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ট্রানজিট ক্যাম্প গুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি তিনটি ক্যাম্প থেকে স্থলপথে রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। আর টেকনাফের ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে প্রত্যাবাসন হবে নাফ নদী অতিক্রম করে। উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দ করিম বলেন, ‘রাখাইনে স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা পেলে বাংলাদেশে থাকা সব রোহিঙ্গা ফিরে যাবে। কিন্তু এখন যে প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হতে যাচ্ছে, তাতে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ফিরে যেতে ৩০ বছর সময় লাগবে। আমরা একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ফিরতে চাই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোর করে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয় যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ১৭ অক্টোবর উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। ওই দিন বিকেলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নিধারিত সময়ে শেষ হবে।