
সাঈদুল রহমান সাকিব– ব্যস্ততম সড়কে প্রতিদিনের মত চলাচল করছে যানবাহন। হঠাৎ রাস্তায় বসে টুকুর টাকুর করে ইট ভাঙ্গছে এক ব্যক্তি। আবার তাতে বালির মিশ্রণ তৈরি করে রাস্তায় সৃষ্টি হওয়ার খানাখন্দগুলো ভরাট করছে ব্যক্তিটি। বিষয়টি দেখে স্বাভাবিক ভাবে মনে হতে পারে সড়ক উন্নয়ন কতৃপক্ষ বা সিটি করপোরেশনের শ্রমিক স্বাভাবিকভাবে রাস্তা সংস্কারের কাজ করছেন। কিন্তু তা মনে করে থাকলে ভুল হবে! আসলে রাস্তা সংস্কারে কাজ করা ব্যক্তিটি একজন খেটে খাওয়া রিকশা চালক।
দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় সৃষ্টি হওয়ার খানা খন্দের কারণে প্রতিদিন সড়কে ঘটছে দূঘটনা। ফলে চালকদের গাড়ি চালাতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে নগর কতৃপক্ষের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় শেষমেশ নিজ উদ্যোগে রাস্তা সংস্কারের কাজে নেমে পড়েন অটোরিকশা চালক শাহজাহান মিয়া।
সোমবার (৬ নভেম্বর) নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় সড়কে এমনি এক চিত্রের দেখা মিলে। যেখানে দেখা যায় শাহজাহান মিয়া সকাল থেকে একাই নিজ গাড়িতে করে বালি, ইট, সংগ্রহ করে রাস্তায় যে সকল খানাখন্দ রয়েছে তা ভরাট করছেন।সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্তগুলো ইট দিয়ে ভরাট করতে দেখা যায় তাকে।
সড়কে অসংখ্য গর্ত। অনেক দিন ধরেই এভাবে পড়ে আছে। সংস্কার হচ্ছিলো না। বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সড়ক মেরামতে কংক্রিট আর বালি নিয়ে এই চালক নিজেই নেমে পড়েছেন সড়ক মেরামতের কাজে।
বিষয়টি নিয়ে অটোরিকশা চালক শাহজাহান মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে গাড়ি চালাতে যেমন অসুবিধা হয় তেমনি গাড়িগুলো গর্তে পড়ে অনেক সময় উল্টে যায়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাচলে অসুবিধা হয়।যানযট সৃষ্টি হয় তাই সকলের সুবিধা হওয়ার জন্যে এগুলো মেরামত করে দিচ্ছি।
সংস্কারের দায়িত্ব তো সিটি করপোরেশনের আপনি কেন করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব থাকলে তো তাদের কোন খোঁজ নেই, তারা যদি কাজগুলো করতো তাহলে আমার মত চালকের বাধ্য হয়ে রাস্তা মেরামতের কাজে নামতে হতো না। কতৃপক্ষের দিকে না তাকিয়ে নিজে খানাখন্দগুলো ভরাট করে দিলাম যাতে নিজেরও গাড়ি চালাতে কষ্ট না হয় আর সাধারণ মানুষেরও উপকার হয়, সেই চিন্তা থেকে নিজে এই সিদ্ধান্ত নিলাম।
শাহাজাহানের এমন উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েনছেন সাধারণ পথচারী ও এলাকাবাসী। মুসলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মাদ কাইয়ুম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে প্রায় নানা দূর্ঘটনা সম্মুখীন হতে হয়। শুধু একবার কোনোরকম যেনতেনো ভাবে কাজ করে চলে যায়। বর্ষায় পানি জমে সেখানে গর্ত সৃষ্টি হয়। তা সংস্কারের জন্য আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। ভালো ভাবে কাজ করলে এমন অবস্থা হতো না।
একই এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন বলেন, শাহজাহানের কাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে কাজটি নগর কতৃপক্ষের। আমরা হোল্ডিংট্যাক্স দিচ্ছি, কর দিচ্ছি আমাদের নাগরিক সুবিধাগুলো খেয়াল রাখা দরকার কতৃপক্ষের। মানুষ বাধ্য হয়ে এখন নিজেই এভাবে মেরামত করার কাজ করছে। এক কথায় এটি নগর কতৃপক্ষের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না।
রাষ্ট্র, সমাজ, নগরকে পরিবর্তন করতে হলে সরকারের পাশাপাশি সুনাগরিক হিসাবে আমাদেরকে শাহাজাহানের মতো নিজেদের মাঝে দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এমন মনোভাব সৃষ্টি হলে তবেই নতুন প্রজন্ম সুন্দর সমৃদ্ধির একটি দেশ উপহার পাবে এমনটা মনে করছেন সচেতন মহল।