
রাজধানী ভাটারার নূর জুয়েলার্স এ অভিনব কায়দায় দুর্ধর্ষ চুরি স্বর্ণ ও স্বর্ণ বিক্রির ১২ লক্ষ টাকাসহ ০৮ চোর গ্রেফতার।।
দেলোয়ার হোসেন
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ লালবাগ জোনের একটি টিম গত (১৪ এপ্রিল২০২৩ )তারিখ দুপুরে ভাটারা থানাধীন নতুন বাজার মাদানী এভিনিউস্হ হাজী ম্যানশনের নীচতলার নূর জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মচারীগণ দোকানে তালা লাগিয়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদে জুম্মার নামায আদায় করার জন্য যান। নামায শেষে অনুমান-০১:৪৫ ঘটিকার সময় জুয়েলার্সের দোকানে এসে দেখতে পান দোকানের কলাপসিবল গেইট ও সাটারে দেয়া তালাগুলো কাটা। পরবর্তীতে মালিকসহ দোকানের কর্মচারীরা ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান স্বর্ণালংকারের বক্স গুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং
দোকানের ট্রেতে রাখা কোন স্বর্ণালংকার আর নেই। বাদী ও তার কর্মচারীরা আশ-পাশের দোকানদারের উপস্থিতিতে হিসাব-নিকাশ করে দেখতে পান যে প্রায় ১৮৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ক্যাশে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা তালা কেটে চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। তো চুরার ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় ৷ মামলা নং-৩৩, তারিখ-১৫-০৪-২০২৩
মামলা রুজু হওয়ার পরপর থানা পুলিশ, ডিবি”র বিভিন্ন বিভাগসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত শুরু করে। এতোপূর্বে এ ধরনের তদন্তে অভিজ্ঞ হওয়ায় গোয়েন্দা লালবাগ জোনাল টিমও মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।
প্রায় ২ মাস ছায়াতদন্তের এক পর্যায়ে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ জন আসামীকে সনাক্ত করন সম্ভব হয়। বিভিন্ন মাদক, অনলাইন/ অফলাইন জুয়া এবং অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপে আসক্ত ভাসমান এই চোরদেরকে গ্রেফতার করাটাই হয়ে ওঠে পরবর্তী বড় চ্যালেঞ্জ।
গোয়েন্দা লালবাগ জোনাল টিমের সদস্যগণ গত দিন এবং রাতে কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া ও নারায়নগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ঐ চোর চক্রের সর্দারসহ ০৮ জনকে গ্রেফতার করে
তাদের হেফাজত থেকে চুরি হওয়া ০২ ভরি
স্বর্ণ , স্বর্ণ বিক্রির ১২ লক্ষ টাকা এবং তালা কাটার যন্ত্রপাতি, চুরির কাজে ব্যবহৃত তিনটি bmw ছাতা উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলঃ- (১) মোঃ শরীফ @ জামাই শরীফ, (২) মোঃ আমির হোসেন @ মোটা আমির, (৩) মোঃ ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা @ কানা মোটা ইয়াছিন, (৪) মোঃ ফারুক , (৫) মোঃ নুরে আলম সুমন @ ডিবি সুমন, (৬) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন @ আব্দুল্লাহ (৭) মোকাররম হোসেন @ রুবেল @ মনির হোসেন @ মনু এবং (৮) মোঃ পারভেজ।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা ইতোপূর্বে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও থানার মানি একচেন্জ, জুয়েলারি সপ, টায়ার টিউবের আড়ৎ, লাইট হাউজে বিশেষ কায়দায় তালা কেটে, শাটার ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছে।
এ চক্রটি কোন একটা প্রতিষ্ঠানে চুরি করার আগে সে এলাকায় কয়েকদিন অবস্থান করে। পায়ে হেঁটে, রিক্সায় চড়ে এলাকা রেকি করে। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কোথায় যায়, কখন কতক্ষণ অবস্থান করেন তাও পর্যবেক্ষণ করে। অপরাধ সংগঠনের দিন মালিক/ কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান বাইরে থাকাকালীন চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গাতে অবস্থান নিয়ে কখনো ছাতা, কখনো চাদর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক ধরনের আড়াল সৃষ্টি করে। পরে বড় তালা কাটার যন্ত্র দিয়ে মুহূর্তেই কলাপসেবল ও সাটারের তালা কেটে একাধিকজনকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে শাটার বন্ধ করে দেয়। ভিতর থেকে চুরি কর্ম শেষ হওয়া পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অবস্থানে সতর্ক থেকে ছাতা এবং চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি রাখে। নির্দিষ্ট কিছু দোকানদারের কাছে তারা চোরাই স্বর্ণালংকার কম দামে বিক্রি করে দ্রুত নিজেদেরকে । ধরা পড়া এড়ানোর জন্য এই চক্রের সদস্যরা সব রকমের প্রযুক্তিগত সর্তকতা অবলম্বন করে থাকে বিধায় তাদেরকে সহসা ধরা যায় না। জুয়া খেলা, অবৈধ মাদক এবং অবৈধ যৌনতায় আসক্ত হওয়ায় চুরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাদের কাছে বেশি সময় থাকে না। গ্রেফতারকৃতদের পুলিশ রিমান্ডে এনে ইতোমধ্যে আরো কতগুলো অপরাধ সংগঠন করেছে, কারা কারা জড়িত ছিল, কোথায় চোরাই মাল বিক্রয় করে – সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। উক্ত বিষয় আজ দুপুর ১২ ঘটিকায় ডিবি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে লালবাগ জোন ডিবি ডিসি মশিউর রহমান ৷