
মোঃ রিপন হাওলাদার
রাজধানীর গুলশান-বনানীতে অবৈধ স্পা সেন্টারের অন্তরালে মাদক-পতিতা বাণিজ্য।
প্রকৃত স্পা সেন্টার একটি শিল্প তবে এর অপব্যবহারে এইডস ছড়ানোর অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্পা শারীরিক অবসাদের জন্য ব্যবহৃত হলেও এদেশের স্পা সেন্টারে থেরাপীর আড়ালে চলে পতিতাবৃত্তি ও মাদক সেবনের মতো অবৈধ কার্যক্রম।এটা এখন এক প্রকার প্রকাশ্য ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ২০২২ সালে বেশ কিছু গণমাধ্যম এসেছে কক্সবাজারে ৭১০ জন এইচআইভি রোগী সনাক্ত হয়েছে যার মধ্যে রোহিঙ্গা ছিলেন ৬১২জন।
অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীতে স্পা সেন্টারের আড়ালে শুধমাত্র সিটি কর্পোরেশন থেকে বিউটি পার্লার অথবা সেলুনের ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে ছোট ছোট ঘরের আদোলে তৈরি রুমগুলোতে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে চলে এসকল পতিতাবৃত্তি ও মাদক সেবন।এসকল অবৈধ স্পা সেন্টারের শেল্টারের দায়িত্বে রয়েছে নামসর্বস্ব কিছু গণমাধ্যমের কথিত সাংবাদিক।
অনুসন্ধানে জানা যায়,বনানীর রোড নং-২৭, বাড়ী নং-৩৭, বনানী কবরস্থানের বিপরীত পার্শ্বের ভবনটিতে স্পা সেন্টারের আড়ালে পতিতাবৃত্তি ও মাদক সেবনের আখড়া তৈরি করেছেন খন্দকার আবু বক্কর ওরফে (আবু শহিদ) নামক দৈনিক ‘মাতৃজগত’ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি। তার ব্যপারে খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, এক সময় তিনি মিরপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে পতিতাবৃত্তির দালালি করতেন। এছাড়াও বনানী ২ নং সড়কের বাড়ী নং ২৬ দ্বিতীয় তলায় একাধিক নারী পাচার মামলায় অভিযুক্ত জনি ম্যাসাজ পার্লারের অন্তরালে নির্বিঘ্নে অনৈতিক যৌন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
গুলশান-১ এর রোড নং-১৩০, বাড়ী নং-২৮ (লেকফ্রন্ট মাইনুল ভিলা)তে আল আমিন ওরফে (সরদার সাব) নামের এক ব্যক্তির স্পা সেন্টারের আড়ালে রয়েছে পতিতাবৃত্তি ও মাদক সেবনের আখড়া। তবে এটির দায়িত্বে রয়েছেন তাহির হোসেন ওরফে (পাপ্পু) নামক একাধিক মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলার আসামিসহ সোহাগ ও সাকিব আহমেদ ওরফে (সাঈদ),ওরফে (রাকিব) নামক নারী পাচারকারীর চক্রের দালাল।
একটি সূত্র বলছে,উক্ত পাপ্পু নিজেও একাধিকবার স্পা সেন্টারের মালিক হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তবে বার বার মামলা হওয়ায় এখন অন্যের স্পা সেন্টারে কমিশন সুবিধায় দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছে।গুলশান:-১ রোড:-নং ১৩১,বাড়ি নং ৬০/বি, খুশবু রেষ্টুরেন্ট এর উপরে স্মার্ট বিউটি কেয়ার মালিক সুমনা ওরফে সুলতানা।
গুলশান:-১ রোড:-১৩০, বাড়ি নং ২৮ লিপ্ট এর -৪ ,মালিক লাবনী আক্তার ইভা।
গুলশান-২ এর রোড নং-৯৫, বাড়ী নং-১, লেভল-২ (প্ল্যাডিনাম মার্কেট) এ ঢাকা স্পা গুলশান (পূর্বের নাম ডায়মন্ড স্পা) নামে একাধিক মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলার আসামি নয়ন আকাশ ওরফে (প্রিন্স) ও তার সহধর্মীনি রিয়া আক্তার পতিতাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন দিন ধরে। সূত্রে আরো জানা যায়, গুলশান-বনানীতে এক সময় একচেটিয়া পতিতাবৃত্তি ও মাদকের ব্যবসা করেছেন এই দম্পতি।
গত ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৪৭নং রোডের ২৫নং আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।সেখানে অভিযান চালাতে গেলে দুই তরুণী ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। এর মধ্যে একজন মারা যান।ওই স্পা সেন্টার থেকে পরে সাতজনকে আটক করা হয়। এঘটনায় একটি মামলাও হয় স্পা সেন্টারটির বিরুদ্ধে। কিছু দিন বন্ধ থাকলেও ফের ওই স্পা সেন্টারের কার্যক্রম চলছে দেদারসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন,ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্পা সেন্টারের মালিক শাহিনুর আক্তার পায়েল ও তার স্বামী হাসান স্পা নামক দেহব্যবসাটি আবারো আগের মতো চালু করেছেন।
হোটেল ‘পার্ক ভিউ লিমিটেড’ গুলশান-২ এর রোড নং-৬৮/এ, বাড়ী নং-১৫ এ তানভির আহমেদ অনি নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘ
দিন যাবৎ স্পা সার্ভিস এর আড়ালে হোটেলটিতে পতিতাবৃত্তি ও নাইট পার্টির আড়ালে মাদকের রমরমা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন। এ কাজে তার সহযোগি হিসেবে রয়েছেন সবুজ নামের আরও একজন।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ছাত্র জনতাদের এক দাবিতে বলা হয় গুলশান-বনানী থেকে এ সমস্ত স্পা সেন্টার নামক অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করবেন তারা।
গত কিছু দিন আগেও গুলশানে স্পার আড়ালে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে সিআইডি কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ২৪ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর কয়েক মাস আগেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি অভিযানে স্পা সেন্টারের মালিকসহ দেহব্যবসায়ীদের মামলা প্রদান করা হয়। কিন্তু একাধিক অভিযানের পরেও স্পা সেন্টারের দৌরাত্ম দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে দেশের যুব সমাজ।
স্থানীয়রা বলছেন,গণমাধ্যমে একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ছাত্র-জনতার অভূত্থানের পূর্ব সরকার আমলে তাদের পালিত পুলিশ প্রশাসন নাম মাত্র মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান পরিচালনা করত। অভিযান পরিচালনা করে এদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেও কিছু দিন পরে আইনের ফাঁকফোকরে বেড়িয়ে এসে পুনরায় এরা আবারো অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। এতে করে আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ সঙ্কায় রয়েছিলাম। দিন দিন গুলশানে স্পা সেন্টারের আড়ালে এদের অনৈতিক কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে।
এসময় বর্তমান দেশের ছাত্র-জনতা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেনো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের অবৈধ কার্যকলাপ নির্মূলে এগিয়ে আসুক এই কামনা করেন স্থানীয় শান্তিকামী বাসিন্দারা।