দেলোয়ার হোসেন
বিগত ১৯৯৩ সালে ১৩ই জুলাই রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদি দোকানে কতিপয় সন্ত্রাসী কর্তৃক পিতা-পুত্র’কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। উক্ত হত্যা কাণ্ডে ঘটনায় নিহতের ছেলে কেরানীগঞ্জ থানায় ০১টি হত্যা মামলা দায়ের করে; যার মামলা নং-৯, তারিখ ১৩ জুলাই ১৯৯৩। পিতা-পুত্র হত্যার ঘটনা তখন এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের তৈরী হয়েছিল এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয়েছিল। দায়েরকৃত হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৬ আগস্ট ১৯৯৪ তারিখ হত্যাকান্ডে জড়িত ০৫ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২১ জুলাই ২০০৪ তারিখ বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আরিফসহ ০৫ জনকে ডাবল মৃত্যু দন্ডে রায় প্রদান করেন। ২০০৮ সালে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক পুনবিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত কর্তৃক সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ গ্রেফতারকৃত আরিফসহ ০৫ জনের বিরুদ্ধে পূর্বে প্রদানকৃত ডাবল মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। রায় ঘোষণার সময় শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম @নজু এবং মিষ্টার ব্যতীত অপর ০২ আসামি মোঃ আরিফ ও মোঃ মাসুদ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত সাজা পরোয়ানা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। র্যাব পলাতক আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পিতা-পুত্র’কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন পলাতক আসামি মোঃ আরিফ @সরিফুল ইসলাম (৫২), পিতাঃ মৃত আব্দুল আওয়াল, কেরানীগঞ্জ, ঢাকাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম শরিফুল রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় মালোপাড়া বারিশুর বাজারে মুদি দোকানের ব্যবসা করতো। দোকানটি গুদারাঘাট সংলগ্ন সুপরিচিত হওয়ায় ভিকটিম শরিফকে প্রায়সময়ই মধ্যরাত পর্যন্ত বেচা-কেনা করতে হতো। তার দুই পুত্র খোকন (তৎকালীন বয়স ৯) ও শাহজাহান (তৎকালীন বয়স ১২) নিয়মিত ভিকটিম শরিফের রাতের খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসতো এবং তারা তার বাবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে দোকানে পড়া-শুনা করে দোকানেই ঘুমিয়ে পড়তো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আরিফ ও তার অন্যান্য সহযোগীরা কেরানীগঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। তারা কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসা করতো এবং নিজেরাও মাদক সেবন করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আরিফ ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রায়শই রাতে স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন দোকান হতে চাঁদা আদায়, জোরপূর্বক ক্যাশ বক্স হতে নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল ছিনিয়ে নিতো বলে জানা যায়। ঘটনার দিন ভিকটিম শরিফ প্রতিদিনের ন্যায় রাতে দোকানের বেচা-কেনা শেষ করে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এবং দোকানের পিছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। ঐসময় ভিকটিম শরিফের দোকানে গ্রেফতারকৃত আরিফ ও তার সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলে সে বাকবিতন্ডা ও চিৎকার করে। পরবর্তীতে তারা দোকানের ক্যাশ বক্স হতে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম শরিফ বাধা দেয়। এসময় গ্রেফতারকৃত আরিফ ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে থাকে। ভিকটিমের চিৎকার শুনে দোকানের পিছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা তার দুই সন্তান পিতাকে বাঁচাতে গ্রেফতারকৃত আরিফ ও তার সহযোগীদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। কিন্তু তারা ভিকটিমের দুই সন্তানকেও দেশিয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং ০৩ জন ভিকটিমই মারা গিয়েছে ভেবে নিশ্চিত হয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে ঐদিন ভোরে স্থানীয়রা ভিকটিমের দোকান খোলা দেখে সেখানে আসে এবং দোকানের ভিতরে তিনটি নিথরদেহ পড়ে থাকতে দেখে ভিকটিমের বড় ছেলেকে খবর দেয়। ভিকটিমের বড় ছেলে দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় তার বাবা ভিকটিম শরীফ ও তার ছোট ভাই খোকন মৃত্যুবরণ করেছে এবং তার অপর ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় শাহজাহানকে ভিকটিমের বড় ছেলে গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়।