মোঃ ইসারুল, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবিনগরে প্রায় ৫ বছর আগে আগাম টাকা দিয়ে জমি কেনার পর সেই কৃষককে জোরপূর্বক জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অসহায় কৃষক পরিবার। যাদের কাছ থেকে জমি কিনেছে সেই প্রভাবশালী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে গ্রাম্য সালিশে শুধুমাত্র কোরআন হাতে নিয়ে শপথ করিয়েই কৃষককে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সীধান্ত নেয় সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ।
জানা যায়, গত ২২ জুন সকালে দেবিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সম্মেলন কক্ষে একটি জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সালিশ বসে। এসময় বিবাদীদের শুধুমাত্র কোরআন হাতে শপথ করিয়েই সীধান্ত দেয়া হয়। এতে এক কৃষকের ৫ বছর ধরে চাষাবাদ করা জমি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পুরোটাই সাফাই পক্ষ নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক ঔ ইউনিয়ন পরিষদে ছিল মাদক ব্যবসায়ী ও চেয়ারম্যানের নাটক। তবে রায়ের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পারায় বাড়ি ফেরার পথে ভুক্তভোগী অসুস্থ হয়ে পড়ে বেশ কয়েকদিন। উল্লাসে ফেঁটে পড়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও প্রতারক আনারুল ইসলাম।
এনিয়ে মঙ্গলবার সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী কৃষক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী স্থানীয় বাসিন্দা,ভুক্তভোগী কৃষক, প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়,২০১৯ সালের জুলাই মাসে সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের চরদেবিনগর হেফাজ বিশ্বাসের টোলা গ্রামের ১০ কাঠা ফসলী জমি কিনে নেন একই গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের ছেলে কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম (মহি) (৪২)। এই জমি কেনা বাবদ ৫ কাঠা জমি ৫০ হাজার করে ও ৫ কাঠা ৬০ হাজার টাকা করে মিলে মোট সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেন কৃষক শফিকুল ইসলাম। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর সময় পেরিয়ে গেলেও জমি রেজিস্ট্রি দিতে নানারকম টালবাহানা করতে থাকে একই গ্রামের মৃত মহসীন আলীর ছেলে মো.আনারুল ইসলাম ও তার ভাই মনিরুল ইসলাম।
কৃষক শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন,জমির মালিক আনারুল ও মনিরুলের সাথে ১০ কাঠা জমি চুক্তি অনুযায়ী সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। তারা জানায়, শীগ্রই জমি রেজিস্ট্রি দিবে। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করতে করতে দীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে যায়। তবে টাকা দেয়ার পর থেকেই সেই জমিতে আমি বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে আসছি।এদিকে বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দিলেও বসতে অস্বীকৃতি জানায় আনারুল ও তার ভাই মনিরুল।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করেই গত ২২ জুন সকালে উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিশে বসে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ। সালিশে তিনি আনারুল ও মনিরুলকে কোরআন হাতে শপথ করাতে বলেন। এসময় তারা কোরআন হাতে নিয়ে সালিশে বলে, আমরা টাকা নেয়নি। আর এতেই চেয়ারম্যান তাদের পক্ষ থেকে উৎকোচ গ্রহন করে,পরোক্ষ তাদের পক্ষে নাটকীয় সমাধান করে দেন। হতাশ্খিত ভুক্তভোগী বলেন আমার ৫ বছর ধরে থাকা জমি থেকে তাড়িয়ে দেন। এমনকি সালিশের পরদিন সকালে বাড়িতে আনারুল মনিরুল ও তার লোকজন এসে জমির দিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করলে বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা।
কৃষক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী এলিনা বেগম জানান,আমি তিন দফায় তাদেরকে জমি কেনা বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয় আনারুল ও মনিরুলকে। টাকা দেয়ার পর থেকেই জমি দখলে দিলেও রেজিস্ট্রি দিতে নানারকম টালবাহানা করতে থাকে। তারা এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। সীমান্ত এলাকা থেকে হেরোইন সংগ্রহ করে সারাদেশে সরবরাহ করে তারা। কিন্তু এখনও তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আমাদের নায্য জমি থেকে বিতাড়িত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, এলাকার প্রায় সবাই জানে, গত প্রায় ৫ বছর আগে ১০ কাঠা জমি বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু তবুও বারবার বলেও জমিগুলো রেজিস্ট্রি দিচ্ছিলো না আনারুল মনিরুল। আমরা অবাক হয়েছে, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একতরফা সালিশ করে কৃষক শফিকুল ইসলাম মহিকে জমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তার সাথে চরম অন্যায় হয়েছে। আমরা আনারুল মনিরুলসহ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল সূত্রে জানা যায়, ৫ বছর আগে ১০ কাঠা জমির দাম তৎকালীন বাজারমূল্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা হলেও বর্তমানে তা ৩০ লাখ টাকা। দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় রেজিস্ট্রি না দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এমন পরিকল্পিত সালিশের কৃষক শফিকুল ইসলামকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে কথা বলতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি দেবিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ। তবে প্রতিবেদনে বসে আবারও মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ফোন বন্ধ করে দেন চেয়ারম্যান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মেহেদী হাসান জানান,এবিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনস্বার্থে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি বলে জানান তিনি।