
মাদকে ভাসছে গংগাচড়ার মর্নেয়া ইউনিয়ন এবং রংপুর সিটি ৪নং ওয়ার্ড এলাকা
#দিনরাত ২৪ঘন্টায়, পাঁচ হাজার বোতল ফেনসিডিল বিক্রি # কারা এর নেপথ্যে #
সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে মাদক। ধর্ষণ, খুন ,চুরি ,ছিনতাই চাঁদাবাজি সহ নানা অপরাধের জনক হচ্ছে মাদক। ভয়াবহ এই মাদক নির্মূলে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি প্রণয়ন করার পর রংপুরের অনেক স্থানে মাদক বিক্রি বন্ধ করতে পারলেও গংগাচড়ার মর্নেয়া ইউনিয়ন মাদক মুক্ত করতে পারছেনা পুলিশ প্রশাসন।
প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মটরসাইকেল,অটো রিকশাসহ কার-মাইক্রোতে করে মর্নেয়ায় আসে ফেনসিডিল সেবন করতে । এবং এখানকার মাদক কারবারিরা প্রকাশ্যে এই ফেনসিডিল বিক্রি করছে মাদক সেবনকারীদের কাছে। বিশেষ করে মর্নেয়ার ৯নং ওয়ার্ডের তালপট্টি চড় এলাকায়। সেখানে বাঁশের ব্যারাক দিয়ে প্রকাশ্যে ফেনসিডিল বিক্রি করছে কারবারিরা। এছাড়াও ওই এলাকায় ছোট হামিদুল বড় হামিদুল,করিমের দিঘি এলাকায় আব্দুল রশিদ, হেছানটারী নামাচড় এলাকার আনছার আলী,আলসিয়ার মোড়ের মশিয়ার সর্দার, শেখপাড়া বড়ব্রীজ এলাকার মমিনুল,হাজিপাড়া নদীর পাড়ে মোকাদ্দেস ও হামিদুল, বাঘমারা চড়ের পাইকার ডাইল কারবারি জমচোরা এলাকার মাদক সম্রাট মতিয়ুর রহমান লাভলু, ছফিয়ার রহমান,১৪ মাথা বামনটারী এলাকার মন্জুসহ আরো অনেকে।এছাড়া ৪ নং ওয়াড কুকরুল গলাকাটার মোড়ের পশ্চিম পাশে মৃত আমিনুল ছেলে সোহেল,আমিনুলের বউ তারা বেগম,লাভলু এবং তার বউ, মেয়ে লাইজু,অনজিনা সহ আরও অনেকে মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসি ও স্থানীয়রা জানান, এইসব মাদককারবারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় গ্রেফতার হওয়ার পরেও বিভিন্ন কৌশলে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে এসে স্বাভাবিক জীবনে না ফিরে পুর্নারায় মাদককারবারীর সাথে যুক্ত হচ্ছেন।
অভিযোগ করে স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী সামাদ মিয়া,কাপড় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, চায়ের দোকানদার সাইফুল মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মাদককারবারিরা এই মর্নেয়া ইউনিয়নের নখদর্পনে মাদককারবার করে আসলেও আজ অবদি কোন কার্যকরি ভুমিকা পালনে সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।সচেতন মহল বলছেন সাধারণ মানুষ সুশৃঙ্খল ভাবে তাদের সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে যথেষ্ট হিমশিম খাচ্ছে। অভিভাবকের দৃষ্টির আড়াল হলেই তাদের সন্তান মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমন একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সেখানকার উঠতি বয়সের যুবকরা।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন এই এলাকায় যে বেপরোয়াভাবে ফেনসিডিল বিক্রি হয় তাতে মনে হয় এরা লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদক কারবারি। এদের বিচরণ দেখে মনে হয় প্রশাসনকে তারা কিনে নিয়েছেন, তাদের মাদক বিক্রির অবৈধ অর্থ ও আধিপত্যের দাপটে এখানকার সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায়না, এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে ফেনসিডিল সেবন করতে,এই তথ্য কি প্রশাসন জানেনা?
স্থানীয়রা আরো বলেন, সম্প্রতি কিছুদিন পূর্বে প্রশাসনের লোকজন এখানে অভিযান চালায় এতে কারবারিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো প্রশাসনের লোকজনকে চোর সাব্যস্ত করে তাদের উপর হামলা চালায়, এতে কয়েকজন পুলিশ গুরুতর আহত হয়। এতো কিছুর পরেও পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে জোড়ালো কোনো পদক্ষেপ না গ্রহণ করার হেতু কি ?
এ বিষয়ে গংগাচড়া মর্নেয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, আমি ইতোপূর্বে মাদক বিরোধী ৩টি কর্মশালা করেছি। মাদক কারবারিদের তালিকা করে গংগাচড়া থানার তৎকালীন ওসির কাছে জমা দিয়েছিলাম । তারা বিষয়গুলো আমলে নেয়নি। তিনি আরো বলেন মাদক উৎপাদনকারী, কারবারি সরবরাহকারী,মধ্যস্থতাকারি, আশ্রয় প্রদানকারি ও প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সহায়তাকারী কেউই এর দ্বায় মুক্তনয়, তারা সবাই সমঅপরাধী এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জোড়ালো হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।
মর্নেয়ায় মাদক নির্মূলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গংগাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল হোসেন বলেন,মর্নেয়ার যে এলাকা গুলোতে মাদক কারবার হয় সে এলাকাগুলোর কিছু অংশ কাউনিয়া থানা কিছু অংশ লালামনিরহাট থানা আবার কিছু অংশ পড়েছে হাজিরহাট থানা। আর এটাই ওই কারবারিরা সুযোগ নিয়েছে। সম্প্রতি কয়েক দিন পূর্বে এক কারবারিকে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল সহ ধরেছি এর আগেও অনেক কারবারিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি ।তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে পূনারায় আবার মাদক কারবারি শুরু করে। তারপরেও আমরা থেমে নেই ,মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান আমাদের অব্যাহত রয়েছে। তবে শুধু প্রশাসন নয়, সেই এলাকার সচেতন মহলকেও মাদক নির্মূলে সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে।