
ময়মনসিংহ জেলা ফুলবাড়িয়া উপজেলা ৭ দিনের মধ্যে বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ।
ময়মনসিংহ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক মোঃ আমিরুল ইসলাম হীরাঃ
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন কালে তদন্ত কমিটি বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কলাম, ছাদ ও সিড়ি ৭দিনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলে পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন তদন্ত কমিটির প্রধান এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা) রেজাউল করিম, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক, ডিজাইন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক, পিইডিপি-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান এবং ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল জামান। কমিটি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে নির্মাণাধীন বিদ্যালয় ভবনের খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা মাটি খুঁড়ে ভবনের বেইজ, কলাম, ছাদ, সিড়ি ও থিকনেস পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্ত কমিটি কলাম, ছাদ, সিড়ির নির্মাণকাজে ব্যাপক ত্রুটি পাওয়ায় তা বাতিল করে ৭ দিনের মধ্যে ভেঙ্গে পুনরায় নির্মাণের জন্যে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেন। অন্যথায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিল আটকে দেয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়।
প্রতিটি ২৬/১৯ ফুট তিন কক্ষের এই ভবন ৯৯ লাখ ২৯ হাজার ১৪৬ শত টাকা ব্যয়ে নির্মাণের কাজটি পায় হৃদয় এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যার স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবদীন বাদল। জয়নাল আবদীন বাদল ৬নং ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান । কাজটি পাওয়ার পর স্থানীয় ঠিকাদার আহসান হাবিব নামের এক ব্যক্তির কাছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিক্রি করে দেয় হৃদয় এন্টারপ্রাইজ। দরপত্রের শিডিউল না মেনে যেনতেনভাবে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ওই ভবনের পিলারের কংক্রিটের ঢালাই হাতের ঘসাতেই খসে পড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ‘ভবনটির নিকটে আসা নিষেধ’ সাবধানবাণী লেখা একটি সাইনবোর্ড নির্মাণাধীন ভবনের পিলারে টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ভবন নির্মাণের প্রায় কোটি টাকা জলে গেল বলে অভিযোগ উঠে। তাই দ্রুত ভবনটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণের দাবি জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ২৭ জানুয়ারি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হৃদয় এন্টারপ্রাইজ। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রণব সরকার এবং উপ সহকারী শাহরিয়ার কাজটি তদারক করার দায়িত্বে ছিলেন। পিলার ঢালাইয়ের সময় নামমাত্র সিমেন্ট ব্যবহার করায় স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে পড়েন উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রণব সরকার সেখান থেকে কোনরকমে পালিয়ে রক্ষা পান। ব্যবহার অনুপযোগী বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট দিয়ে কাজ করেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। ঠিকাদার এরই মধ্যে ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। আরো ৩০ লাখ টাকা উঠানো প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠায় সেই টাকা উত্তোলনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের দপ্তরি আবদুল জলিল মিয়া একটি কংক্রিটের পিলারে হাত দিয়ে খোচা দিতেই জুরজুর করে খসে পড়তে শুরু করে। পরবর্তীতে শিক্ষকদের বিষয়টি অবগত করলে সে সময়েই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ভবন নির্মাণে মারাত্মক অনিয়মের বিষয়টি অবগত করেন।
পরবর্তীতে উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউএনওকে জানানো হলে উভয়েই নির্মাণাধীন বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ইউএনও।
উল্লেখ্য যে,এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ প্রতিনিধিদের দাবি এই অনিয়ম দূর্নীতি জন্য দায়ি হলো উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মোর্শেদ।